অলী-আল্লাহ্গণের দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

1
551

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
বাংলা-ভারত উপমহাদেশে কোনো নবি-রাসুল আসেননি। এখানে ধর্ম প্রচার করেছেন অলী-আল্লাহ্গণ। তাঁরা সূদুর আরব মুলুক হতে আবার কেউ পারস্য এলাকা থেকে এ উপমহাদেশে শুধু ধর্ম প্রচার করার জন্যই আগমন করেছেন। তাঁদের মধ্যে হযরত শাহ জালাল ইয়েমেনি (রহ.), হযরত শাহ মখদুম (রহ.), হযরত খান জাহান আলী (রহ.), হযরত শরফুদ্দীন চিশতি (রহ.)-সহ অনেক অলী-আল্লাহর নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা প্রত্যেকেই ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে খানকাহ শরীফ এবং দরাবর শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। হযরত শাহ জালাল (রহ.) ইয়েমেন থেকে ভারতবর্ষ হয়ে বাংলাদেশের সিলেটে আগমন করেছেন। সিলেটের তৎকালীন অত্যাচারী রাজা গৌর গোবিন্দ তাঁকে আসতে না দেওয়ার জন্য সিলেটের সুরমা নদীর সমস্ত নৌকা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আল্লাহ্র বন্ধুকে কোনো মানুষের পক্ষে কি আটকে রাখা সম্ভব?

আল্লাহ্র অলী হযরত শাহ জালাল (রহ.) তাঁর ৩৬০ জন ভক্ত মুরিদকে নিয়ে সুরমা নদীর তীরে এসে দেখলেন, নদী পাড়াপারের সকল নৌকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি একখানা জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়লেন এবং তাঁর অনুসারীদেরকে জায়নামাজ বিছিয়ে তাঁর উপরে চোখ বন্ধ করে মোরাকাবায় বসার নির্দেশ দিলেন। সকলেই দুচোখ বন্ধ করে মোরাকাবা করছেন। আল্লাহর অপার দয়ায় তাদের জায়নামাজ নৌকার রূপ ধারণ করে। ফলে হযরত শাহ জালাল (রহ.) ও তাঁর ৩৬০ জন ভক্ত সুরমা নদী পাড় হয়ে অলৌকিকভাবে রাজ দরবারে চলে আসেন।

হযরত শাহ মাখদুম (রহ.) ছিলেন বড় পির হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর দৌহিত্র। তিনি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা কুমিরের পিঠে চড়ে পদ্মা নদী পাড় হয়ে সিলেটে এসে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানুষের মধ্যে ধর্ম প্রচার করেন। জনশ্রুতি আছে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) সিলেটের পাহাড় থেকে পাথর নদীতে ভাসিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় ৬০ গম্বুজ বিশিষ্ট বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি আজো ৬০ গম্বুজ মসজিদ নামে হযরত খান জাহান আলী (রহ.)-এর স্মৃতি বহন করে চলেছে।

রাজধানী শহর ঢাকার মিরপুরে রয়েছে হযরত শাহ আলী বাগদাদি (রহ.)-এর মাজার শরীফ এবং হাইকোর্ট এলাকায় রয়েছে হযরত শরফুদ্দীন চিশতি (রহ.)-এর মাজার শরীফ। এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বহু অলী-আল্লাহ্র মাজার রয়েছে। তাছাড়া অনেক অলী-আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফও রয়েছে। বিখ্যাত অলী হযরত খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর দরবার শরীফ রয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর নামক স্থানে। তাঁর ভক্ত অনুসারী মহান অলী-আল্লাহ্ হযরত ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ছিলেন জামানার মোজাদ্দেদ এবং তরিকার ইমাম। ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় তাঁর দরবার শরীফ রয়েছে।

বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ অলী, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের মোর্শেদ ছিলেন পিরানে পির দস্তগির, সুলতানুল মাশায়েখ সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)। এই মহান অলী-আল্লাহ্ ১৯৮৪ সালের ২৮ মার্চ বুধবার ৩টা ১০ মিনিটে ওফাত লাভ করেন। তাঁর দরবার শরীফ পরিচালনার জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মোর্শেদের দরবারেই থেকে যান। কিন্তু আল্লাহ্র যা ইচ্ছা, তাই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান আল্লাহ্‌র ইচ্ছাতেই স্বীয় মোর্শেদের দরবার শরীফ থেকে ১৯৮৫ সালের ২৭ মার্চ রাজধানী শহর ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৫৪, আরামবাগ, ঢাকার নাজমা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এর বিল্ডিংয়ে অবস্থান করেন।

আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) ঢাকার আরামবাগে আসার কিছুদিনের মধ্যেই ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে একটি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর সে লক্ষ্যেই তিনি রংপুর সফর করেন এবং পীরগাছা এলাকায় দরবারের জন্য জায়গা দেখেন। রংপুর এলাকার লোকেরা পীরগাছায় দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য দারূণ আগ্রহ প্রকাশ করেন। অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ঢাকায় চলে আসেন। এরপরে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য সাভারে জায়গা দেখা হয়। পরবর্তীতে ঢাকার ডেমরা এলাকায় জমি দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো ফল লাভ হয়নি। এর কিছুদিন পর চিটাগাং রোড এলাকার জনাব নূর মোহাম্মদ আরামবাগে এসে দয়াল বাবাজানকে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য একটা জায়গার কথা বলেন। কাঁচপুরের ব্রীজ হতে ২ কিলোমিটার পূর্বে দেওয়ানবাগ নামক গ্রামে এই জায়গা অবস্থিত। জনাব নূর মোহাম্মদ ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল মোস্তফার বোনের বাড়ীর নিকটে মাত্র ১০ কাঠা জায়গা দরবার শরীফের জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে দেখালেন। আল্লাহর বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ঐ জায়গাটি পছন্দ করেন এবং দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সর্বপ্রথম দরবার শরীফের জন্য মাত্র ১০ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়।

১৯৮৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার শেষের দিকের কথা। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান দেওয়ানবাগে ক্রয়কৃত ঐ ১০ কাঠা জমির উপরে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহর যে কি ইচ্ছা, তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। আর আল্লাহর ইচ্ছাই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আসলে অলী-আল্লাহ্গণ যেহেতু আল্লাহর বন্ধু, তাই তাঁদের সকল কাজের পিছুনেই একটা রহস্য লুকানো থাকে, যা সাধারণ মানুষ বুঝাতে পারে না। কিন্তু পরবর্র্তীতে যখন মানুষের কাছে তা প্রকাশিত হয়, কেবল তখনই মানুষ তার মর্ম বুঝতে পারে। দেওয়ানবাগে সূফী সম্রাটের দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও যেন তদ্রূপ। আল্লাহর মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান দেওয়ানবাগে ক্রয়কৃত জমিতে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার তারিখ ঘোষণা করেন। আর সেই তারিখ মোতাবেক তিনি ঢাকার আরামবাগ হতে কয়েকটি গাড়ীর বহর নিয়ে দেওয়ানবাগে তশরীফ গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সময়সূচি অনুযায়ী ঐ ১০ কাঠা জমির উপরে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ভরাট করে দরবার শরীফের গৃহ নির্মাণের জন্য একটি ভিত্তি প্রস্তুর নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সেখানে একটি ১ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, ১৯৮৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার তারিখে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দেওয়ানবাগে তাঁর দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন, সেদিনটি ছিল পবিত্র আশুরার দিবস। অথচ এ দিবস সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। কেননা, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানই সর্বপ্রথম পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে তাঁর দরবার শরীফে সম্মেলন শুরু করেন। আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র আশুরার অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যখন দেওয়ানবাগে তাঁর দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন, সেদিনটি যে পবিত্র আশুরার দিবস ছিল, তা কারো জানা ছিল না। আল্লাহ্ এবং তাঁর বন্ধুই ভালো জানেন। ৬১ হিজরির ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিবসেই হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও নবি নন্দিনী খাতুনে জান্নাতের প্রাণপ্রিয় সন্তান, জান্নাতের যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর ৭২ জন অনুসারীকে নিয়ে কুখ্যাত এজিদের চক্রান্তে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শহিদ করা হয়। আর সেই সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ মোহাম্মদী ইসলামের সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করে কুখ্যাত এজিদের মনগড়া ধর্ম এজিদি ইসলাম।

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কি অপার দয়া, ৬১ হিজরিতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে যে মোহাম্মদী ইসলাম কারবালায় বিলুপ্ত হয়ে যায়, এ ঘটনার প্রায় সাড়ে ১৩শ বছর পরে আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগের ইমাম মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান দেওয়ানবাগে তাঁর দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করে পুনরায় মোহাম্মদী ইসলামের ঝাণ্ডা উত্তোলন করেছেন। কালের বিবর্তনে মাত্র ৩ যুগের মধ্যেই এই মোহাম্মদী ইসলাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আজ পৃথিবীর শতাধিক দেশে এই মোহাম্মদী ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ১৯৮৫ সালে যখন মাত্র ১০ কাঠা জমির উপর দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করলেন, এর পর সেখানে জলসা মোবারকের আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান দেওয়ানবাগ শরীফে তাঁর মোর্শেদের জন্মদিবস স্মরণে ওরছ শরীফ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

ক্রমেই ওরছ শরীফের তারিখ এগিয়ে আসতে লাগলো। একদিন মাগরিবের নামাজের পরে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান উপস্থিত লোকদের সামনে তরিকার বিষয়ে আলাপ করছিলেন। এরই এক পর্যায়ে আমি দয়াল বাবাজানকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললাম- “বাবাজান! আমাদের ওরছ শরীফের তারিখতো ক্রমশই এগিয়ে আসছে। আমাদের জায়গাতো অল্প। এতবড় অনুষ্ঠান হবে, মানুষদেরকে অন্যের জায়গায় বসতে দিতে হবে। আপনি যদি দয়া করেন, দরবার শরীফের সামনে যে বিশাল মাঠটি রয়েছে, সেটি যদি আমাদের হতো, আমরা যদি তা কিনে নিতে পারতাম, তাহলে ওরছ অনুষ্ঠান করতে খুবই সুবিধা হতো।” আল্লাহ্ মহান বন্ধু, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান আমাকে অত্যন্ত শান্তনার সুরে বললেন, “দেখেন আল্লাহ্ কি করে।” সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান এমন মহান আল্লাহ্র বন্ধু যাঁর পবিত্র জবান থেকে আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থার বাণী প্রকাশ পেয়েছে, মহান দয়াময় আল্লাহ্ কি তাঁর প্রিয় বন্ধুর আকাঙ্খা অপূর্ণ রাখতে পারেন? সত্যিই দেখা গেল, ওরছের অনুষ্ঠান আসার পূর্বে দেওয়ানবাগের কয়েক বিঘার সেই বিশাল মাঠটি সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান ক্রয় করে ফেললেন। সেই বছরই আমরা দেওয়ানবাগ শরীফের বিশাল মাঠে নিজস্ব জায়গায় ওরছ শরীফ পালন করতে সক্ষম হয়েছি।

আল্লাহ্র মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর এই দরবার শরীফের নামকরণ করেন- ‘বাবে জান্নাত’। সূফী সম্রাটের প্রতিষ্ঠিত বাবে জান্নাত দরবার শরীফটি দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাই এই দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ‘শাহ দেওয়ানবাগী’ লকবে ভূষিত হন। তখন মাত্র ১টি দরবার শরীফ থাকলেও আজ সূফী সম্রাটের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে মোট ১১টি দরবার শরীফ রয়েছে, এছাড়া বাংলাদেশে সূফী সম্রাটের নামে দুই শতাধিক খানকাহ শরীফ এবং বহু সংখ্যক জাকের মজলিস রয়েছে। তাছাড়া পৃথিবীর শতাধিক দেশে মোহাম্মদী ইসলামের কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানসহ বেশ কয়েকটি দেশে খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছর ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগস্থ ‘বাবে রহমত’ দরবার শরীফ সম্মেলন চত্ত্বরে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সম্মেলনে যোগদান করে থাকেন। আল্লাহ্র মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের নেতৃত্বে তার সুযোগ্য ৪ সাহেবজাদা আজ বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

আল্লাহর অপার দয়ায় আজ পৃথিবীর শতাধিক দেশে মোহাম্মদী ইসলামের প্রচার হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মানুষ আজ মোহাম্মদী ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর অসীম দয়ার বদৌলতে সূফী সম্রাট দেওয়াবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের সাহেবজাদাগণ আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ৪ জন সাহেবজাদা, প্রত্যেকেই পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা আল আজহারী (মা. আ.) মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাই তিনি আল আজহারী হিসেবে পরিচিত। তিনি আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন এবং আরবি ভাষায় বক্তব্য প্রদান করে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করেছেন। সূফী সম্রাটের মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) ইতালি, লন্ডন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যাণ্ড, জার্মানী, থাইল্যাণ্ড, ভারত, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিয়ে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করেছেন। তাঁর এই প্রচার এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. ফজল-এ-খোদা (মা. আ.) ও কনিষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. মঞ্জুর-এ-খোদা (মা. আ.) হুজুর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাণ্ডসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের কাজে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছেন। এক কথায় সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আর সে লক্ষ্যেই মাঝে মাঝে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশী সফর করে থাকেন। ফলে বিশ্বব্যাপী আজ মোহাম্মদী ইসলামের ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহর মহান বন্ধু, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানাবগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের প্রচারিত আদর্শ মোহাম্মদী ইসলাম পৃথিবীর যে শতাধিক দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, ওমান, মালয়েশিয়া, জাপান, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, ভারত, পাকিস্তান, গ্রিস ও সাইপ্রাস। আর এই প্রচারের লক্ষ্যে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল সংস্থা’ (World Ashek-e-Rasul Organisation) প্রতিষ্ঠা করেন।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের মুরিদ সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। সে কারণেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে তিনি ১১টি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ১। ‘বাবে রহমত’ ১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা। (এখানে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান অবস্থান করেন) ২। নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগে ‘বাবে জান্নাত’, ৩। ঢাকার কমলাপুরে ‘বাবে মদিনা’, ৪। রংপুরে ‘বাবে নাজাত’ ৫। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ‘বাবে বরকত’ ৬। চুয়াডাঙ্গায় ‘বাবে নিয়ামত’ ৭। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ‘বাবে মোর্শেদ’ ৮। ঢাকার মগবাজারে ‘বাবে ফেরদৌস’ ৯। চট্টগ্রামে ‘বাবে মাগফিরাত’ ১০। গাজীপুরে ‘বাবে জান্নাতুল মাওয়া’ ১১। রাজশাহীতে ‘বাবে নূর’ প্রতিষ্ঠা করেন।

এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শত শত খানকাহ শরীফ এবং আশেকে রাসুল জাকের মসলিস প্রতিষ্ঠা করেন। এই দরবার শরীফগুলোতে নিয়মিত জামাতের সাথে নামাজ আদায় এবং শুক্রবারের জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জুমা সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান উপস্থিত ভক্তবৃন্দের উদ্দেশে মহামূল্যবান বক্তব্য প্রদান করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে থাকেন। অতঃপর নতুন লোকদেরকে মোহাম্মদী ইসলামের সবক দিয়ে থাকেন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here