আগামীর প্রযুক্তি

1
622

কেমন হবে যদি সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় দেখা সকল প্রযুক্তি বাস্তবে মানুষের ব্যবহারের নাগালে চলে আসে? কত সহজ হবে মানুষের পথচলা, পেশা থেকে শখ সকল কিছুর সম্মিলন ঘটবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। আজ জানবো ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিয়ে যা ইতোমধ্যেই গবেষণাগারে আছে বা কোনকোনটি পরীক্ষামূলক চালুও হয়েছে।

মাইন্ড রিডার
কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক মারসেল জাস্ট এবং তার দল দীর্ঘদিন ধরে মাইন্ড রিডিং মেশিন তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এটি মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন। সম্ভবত এই স্বপ্ন সর্বপ্রথম দেখেছিলেন ও গবেষণা করেছিলেন নিকোলা তেসলা ।

একজনের মনের কথা আরেকজন বলতে পারবে পড়তে পারবে। বিষয়টা কতটুকু ভালো কিংবা খারাপ হবে তা আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সায়েন্সফিকশান চলচ্চিত্রে দেখেছি। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কে এফএমআরআই বা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং ব্যবহার করছেন। আমরা যখন কোনো কথা বলি বা কোনোকিছু চিন্তা করি, আমাদের মস্তিষ্কে তখন বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন ফুটে ওঠে। এফএমআরআই ব্যবহার করে সেই প্যাটার্নগুলো তুলে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা। কার্নেগি মেলন বলেন, আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কই একইভাবে কাজ করে যদিও আমরা ভিন্ন ভাষাভাষী হই না কেন, একটি ইংরেজি ভাষা ব্যবহারকারী ব্যক্তির মনের ভাব বোঝার জন্য তৈরি করা মেশিন দিয়ে একজন মান্দারীন ভাষাভাষী লোকের মনের ভাবও বোঝা যায়। তবে তাদের মতে, এখানে কিছু জটিলতাও রয়েছে।

এফএমআরআই-এর সাহায্যে যে প্যাটার্নগুলো পাওয়া যায় তাতে কাছাকাছি অর্থের বাক্যগুলোর জন্য প্যাটার্নগুলো প্রায় একই ধরনের হয়। যেমন ‘আমি রাগ করেছি’ বা ‘আমি বিরক্ত’ এ ধরনের বাক্যগুলোর জন্য একই ধরনের সংকেত পাওয়া যায়। ফলে নিখুঁতভাবে বাক্যটি উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে।

থ্রিডি হলোগ্রাম

থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে লাইট ব্যবহার করে তৈরি দ্বিমাত্রিক ছবিকে ত্রিমাত্রিক ছবি বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে যা বোঝাচ্ছেন সেই থ্রিডি হলোগ্রাম আর এই থ্রিডি হলোগ্রাম এক নয়। আমরা যে থ্রিডি হলোগ্রামের কথা বললাম এগুলো আকারে ছোট, অল্প আলোতে দেখতে হয় এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি আর মিক্সড রিয়েলিটির সমন্বয়ে এই হলোগ্রামগুলোকে বাস্তব থেকে বাস্তবতর করে তোলা। যেমনটি টম ক্রুজের মাইনোরিটি রিপোর্টে দেখা যায়, ঘরে বসে হাজার মাইল দূরের অফিসে সশরীরে কাজ করতে পারা!

ব্লকচেইন প্রযুক্তি

মানুষ বিটকয়েনের পরিবর্তে কারেন্সি প্রযুক্তিতে আগ্রহী। বস্তুত, ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। বিটকয়েন অন্য কোনো মুদ্রার মতো যা পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পার্থক্য হচ্ছে এটি ডিজিটাল। কিন্তু এই আধুনিক শতাব্দীতে সবকিছুই ডিজিটালাইজডের নিখুঁত মুদ্রা ব্যবস্থা হবে। বিটকয়েনের সঙ্গে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে ব্লক ভরাট করার মতো যা প্রদানের ডেটা রেকর্ড করে। প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত এই প্রযুক্তিটি এখনো খুবই নিখুঁত এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির সময় এবং সঠিক বিবর্তনের সঙ্গে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

ভবিষ্যতের স্মার্টফোন

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ভবিষ্যতের স্মার্টফান ভাঁজ করে রাখা যাবে। বিশ্বের নামকরা প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্টফোনে এখনো অনেক প্রযুক্তিই আসা বাকি আছে। পাশাপাশি বর্তমানে যেসব ফিচার ফোন প্রচলিত আছে, সেগুলো আরও উন্নত হবে। বাড়বে স্মার্টফোনের ক্ষমতাও। অগমেন্টেড রিয়েলিটিও ব্যবহৃত হবে স্মার্টফোনে। এটি এক ধরনের যান্ত্রিক সেন্স। আমরা আমাদের সেন্স ব্যবহার করে যা অনুধাবন করি, তা একটি কম্পিউটার জেনারেটেড সেন্সরের মাধ্যমে করাই হলো অগমেন্টেড রিয়েলিটি। এ ছাড়াও আপনি চাইলেই ফোনটিকে ফোল্ড করতে পারবেন। এমনকি তা দিয়ে কলমের মতো ব্যবহারও করা যাবে। বর্তমানে ফোল্ডেড স্মার্টফোন বাজারে এনেছে স্যামসাং, হুয়াওয়ে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরো আধুনিক হবে।

চালকবিহীন কার

বিশ্বের সব বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই এখন ‘ড্রাইভারলেস কার’ বা চালকবিহীন কার তৈরির জন্য শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। অনেক গাড়ি ইতিমধ্যে সফলভাবে রাস্তায় চলাচলও করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে এরকম গাড়ি যে বিশ্বের অনেক দেশের রাস্তাতেই দেখা যাবে তা নিশ্চিত। চালকবিহীন গাড়ির সুবিধে হচ্ছে যেহেতু কোনো ড্রাইভার দরকার হচ্ছে না তাই গাড়িটি বসে না থেকে সারাক্ষণ যাত্রী টানতে পারবে। এতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কমে আসবে গাড়ি চালানোর খরচও।
চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে অটোমোবাইল প্রযুক্তি।

হাইপারলুপ প্রযুক্তি
ভবিষ্যতের বাহন হিসেবে সবচেয়ে বেশি চমক হলো হাইপারলুপ। সিলিকন ভ্যালির বিখ্যাত উদ্যোক্তাদের একজন এলন মাস্ক এই সুপার ফাস্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

মূলত একটি টিউবের ভিতর দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটবে কিছু যাত্রীবাহী ক্যাপসুল। বুলেট ট্রেন যেভাবে দ্রুত মানুষকে অনেক দূরের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে এটি তার চেয়েও বেশি গতিতে মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। বলা হচ্ছে ঘণ্টায় ১২০০ কি.মি. বেগে ছুটবে এই ক্যাপসুল।

দ্রুতগতির এই ক্যাপসুল ব্যবহার নির্দিষ্ট দূরত্বের ক্ষেত্রে সত্যি অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে বলে সবাই ধারণা করছে।

জেটপ্যাক

জেটপ্যাক হবে ভবিষ্যতের নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহন, বলছেন কুয়াংচি সায়েন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার কোকার। এটা হবে আকাশে উবার ট্যাক্সির মতো। স্মার্টফোনের অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ জেটপ্যাক ডাকতে পারবে। তারপর জেটপ্যাক আরোহীকে নিয়ে আকাশে উড়বে।”

নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক মার্টিন এয়ারক্রাফট কোম্পানি ইতিমধ্যে জেটপ্যাকের একটা প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে যেটি মাটি থেকে দুই হাজার আটশ ফুট উঁচু দিয়ে ঘণ্টায় ২৭ মাইল বেগে ২৮ মিনিট ধরে চলতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী কোনো ব্যবস্থা উদ্ভাবনের দরকার হবে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here