আমাদেরকে মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে – ইমাম ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ সংবাদদাতা: গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে আশেকে রাসুলগণের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বাণী রাখেন সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের মেজো সাহেবজাদা, দেওয়ানবাগ শরীফের পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর। আশেকে রাসুলের চরিত্র অর্জন করে কিভাবে মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়া সম্ভব, সেই বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেন মেজো সাহেবজাদা হুজুর।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পুরোটি জীবন অতিবাহিত করেছেন আমাদেরকে আশেকে রাসুল বানানোর জন্য। তিনি ৭১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আমাদেরকে আশেকে রাসুল বানানোর শিক্ষা দিয়ে গেছেন, যেন আমরা আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর চরিত্রকে ধারণ করতে পারি এবং সেই চরিত্র নিজেদের মাঝে তুলে ধরতে পারি। তিনি ৭১ বছর বয়স পর্র্যন্ত আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন চরিত্রবান হতে পারি। আমরা যেন আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পথে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি। আমরা যেন মহান আল্লাহকে পাই, রাসুল (সা.)-কে পাই এবং মহান মোর্শেদকে নিজের অন্তরে ধারণ করতে পারি। এই লক্ষ্যে তিনি সর্বমোট ১১টি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্বের ইতিহাসে এটা এক বিরল ঘটনা। কোনো অলী-আল্লাহর বেলায় এরকম বিস্ময়কর ঘটনা নেই। আশেকে রাসুলদের মুক্তির লক্ষ্যে শতাধিক খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া সহস্রাধিক মজলিস তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেন আমরা আশেকে রাসুল হতে পারি। মানুষকে মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়ানোর লক্ষ্যে এই দরবার শরীফ, খানকাহ শরীফ এবং মজলিগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দরবার শরীফগুলো হতে হবে একটি ট্রেনিং সেন্টার, যেখানে মানুষ আসবে, সাধনা শিখবে, মোরাকাবা মোশাহাদা শিখবে এবং আল্লাহকে পাওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করবে। একইভাবে খানকাহ শরীফ ও মজলিসগুলো হবে ট্রেনিং সেন্টার, যেখানে মানুষ নিজের কলুষিত অন্তরকে আলোকিত করার শিক্ষা গ্রহণ করবে।
নিজের চরিত্র সংশোধন করতে হলে, নিজের মধ্যে মনুষ্যত্বকে ফিরিয়ে আনতে হলে, নিজের ষড়রিপু অর্থাৎ- কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য রিপুগুলোকে দমন করতে হলে মোরাকাবার বিকল্প নেই। আল্লাহর সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো মোরাকাবা। দুই পক্ষের যোগাযোগ হয় একমাত্র মোরাকাবার মাধ্যমে। দয়াল রাসুল (সা.) হেরাগুহায় ২৫ বছর বয়স থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ১৫ বছর মোরাকাবা করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর উপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয়।

আমার মোর্শেদ কেবলাজানের অন্যতম ৪টি শিক্ষা হলো- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়া। আত্মশুদ্ধি কি মোরাকাবা বিহনে সম্ভব? দিল জিন্দা কি সম্ভব মোরাকাবা ছাড়া? ক্বালবে আল্লাহকে বসাতে হলে আল্লাহর জিকির অনুভব করতে হলে, তা মোরাকাবা ছাড়া সম্ভব নয়। দুনিয়ার চিন্তামুক্ত হয়ে যে নামাজ আদায় করতে চাচ্ছেন, তা মোরাকাবা ছাড়া সম্ভব নয়। আশেকে রাসুল হতে হলে এই ৩টা শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। যার আত্মশুদ্ধি হলো, যার ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি হলো, যার নামাজে হুজুরি হলো, এই ৩টি চরিত্র যার মাঝে প্রতিস্থাপিত হলো- তিনিই মূলত আশেকে রাসুল। এখন বিষয় হচ্ছে, খানকাহ শরীফ, মজলিস এবং দরবার শরীফগুলোতে এই শিক্ষা প্রতিনিয়ত তালিম গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহকে পেতে হলে নিজের চরিত্র পরিবর্তন জরুরি। সকলের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই, আপনারা মোরাকাবা শুরু করেন। প্রশ্ন করবেন, কীভাবে করব? চোখ বন্ধ করে মালিককে ডাকলে, মোর্শেদের স্মরণ করে মোর্শেদের অসিলা ধরে মালিককে ডাকার জন্যে কি কোনো রাস্তা জানার দরকার আছে? কোনো ভাষা জানার দরকার আছে? আপনি আপনার মালিককে ডাকবেন। চোখ বন্ধ করেন, মালিককে স্মরণ করেন। কাকুতি মিনতি করে তাঁর কদম মোবারক জড়িয়ে ধরে বলেন, ওগো দয়াল মাওলা! দয়াল খোদা! আমি জানি তুমি আমার কুৎসিত চেহারা দেখতে চাওনা, আমি জানি তুমি আমার গলার শব্দ শুনতে চাও না, কারণ আমি পাপী। পাপ করতে করতে পাপ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাই তোমার বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর অসিলা ধরে তোমার দরবারে ক্ষমা চাই, ওগো দয়াল মাওলা, তুমি আমাকে মাফ করে দাও! আমার কুৎসিত চেহারায় নয়, ঐ শাহ দেওয়ানবাগীর নুরের চেহারার অসিলায় আমাকে মাফ করে দাও। আপনি কী পাপ করেছেন আপনি জানেন। তাহলে মোরাকাবা শুরু করার পূর্বে ২ মিনিট নিজের পাপকে স্মরণ করেন। কাকে কষ্ট দিয়েছেন, কাকে লাঞ্ছিত করেছেন, কোথায় আল্লাহর বিরোধিতা করেছেন, কোথায় রাসুল (সা.)-এর বিরোধিতা করেছেন, কোথায় তাঁর নির্দেশ মানেন নাই। একের পর এক চোখ বন্ধ করে স্মরণ করেন, কিছু সময় ব্যয় করেন। পাপের কথা স্মরণ হলে নিজের অন্তরটা নরম হয়ে যায়। এই অন্তর ক্ষমা পেতে চায়। চোখ বন্ধ করে ঐ অনুতপ্ত অন্তরের মাঝে এবার ডাকেন, মাওলা! আমি এই পাপের ক্ষমা চাই। আমি জানি তুমি আমার কথা শুনবে না, তাই শাহ দেওয়ানবাগীর অসিলা ধরে ঐ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাই তোমার কাছে। তুমি ক্ষমা করে দাও। এভাবে যদি ডাকতে পারেন, তাহলে আপনার অন্তরের পাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

আল্লাহর বন্ধু সব দিয়ে গেছেন আমদের মাঝে। কিন্তু আমরা যদি বাগানের ফুলের গন্ধ নিজের মাঝে ধারণ করতে না পারি, ঐ বাগান যতই সজ্জিত হোক নিজের উপকারে আসবে না। মৌমাছি ঐ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নেয়। গাছ ঐ ফুল থেকে নিজের ফল ফলায়। আর আমি যদি ঐ ফুলের মর্ম না বুঝি, তাহলে কোনো মূল্য থাকবে না। আল্লাহর বন্ধু অলীদের বাদশাহর কদমে এসে যদি আলোকিত মানুষ হতে না পারি, তাহলে এই আসার কি মূল্য থাকে? নিজেকে আলোকিত করার বিদ্যা শিক্ষা প্রয়োজন। নিজেকে আলোকিত করতে হবে। আর কতকাল অন্ধকারে থাকবেন। আসুন, আলোর পথ দেখি। আসুন, ঐ আলোকে খুঁজে বেড়াই। যে আলো শাহ দেওয়ানবাগীর পথ। যে আলো রাসুল (সা.)-এর পথ। যে আলো আল্লাহর পথ। সে আলোই মঞ্জিলে মকসুদ।


যদি নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারেন তাহলে আপনার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে? আল্লাহর বন্ধুর কদমে আপনি ১০ বছর কাটালেন, ২০ বছর কাটালেন, ৩০ বছর কাটালেন কিন্তু আপনি মধু সংগ্রহ করতে পারলেন না। নুরে মোহাম্মদীর ধারক বাহককে হৃদয়ে ধারণ করতে পারলেন না। জীবনে এর চেয়ে বড়ো আফসোস আর কী হতে পারে? তাহলে আপনার জীবন হলো অন্ধের মতো। অন্ধ যেমন রাস্তা খুঁজে পায় না, আপনিও আপনার ভিতরে মালিককে পাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাবেন না। তাই এখনই সময় নিজেকে পরিবর্তন করার। বান্দা তত পাপ করতে পারে না, তার মালিক তাকে যত ক্ষমা করতে পারে। আমি বলি, আমি ঐ মালিকের গোলামী করি না, যেই মালিক আপনাকে মাফ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, কে ক্ষমা পেতে চাও আমাকে ডাক। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। আমি ঐ মালিকের গোলামী করি, যে মালিক আপনাকে ক্ষমা করার জন্যে বসে আছেন। আফসোস, আমরা ক্ষমা চাচ্ছি না। দুঃখ এই, আমরা ক্ষমা পেতে চাই না। আপনারা কি ক্ষমা পেতে চান না? আপনারা কি আল্লাহকে পেতে চান না? আপনার কি রাসুল (সা.)-কে পেতে চান না? আপনারা কি ইমানদার হতে চান না? আপনারা কি আপনার অন্তরকে আলোকিত করতে চান না? আর কতকাল বসে থাকবেন? আর কতকাল সময় নষ্ট করবেন? চলে যাচ্ছে সময়। বছরের পর বছর, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। একদিন চলে গেল অর্থাৎ আপনার জীবন থেকে একটা দিন চলে গেল। এখনও সময় আছে, আসুন না আমরা ক্ষমা চাই।

যিনি তার মালিকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলেন, আল্লাহর কসম কবর আর অন্ধকার হবে না তার জন্যে। ঐ কবর থাকবে আলোকিত। যিনি তার মোর্শেদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলেন, আল্লাহর কসম ভয় থাকবে না তার অন্ধকার কবরের জন্যে। কারণ ঐ অন্ধকার কবরে তিনি দেখবেন আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীকে। আল্লাহর বন্ধু বলবেন, বাবা তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে, আজ প্রতিদান দিবস। আমি তোমার সাথে আছি। ভয় পেয়ো না। তোমার স্বামী তোমাকে ছেড়ে গেছে। তোমার স্ত্রী তোমাকে ছেড়ে গেছে। তোমার সন্তান তোমাকে ছেড়ে গেছে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যাই নাই। তুমিতো সব কিছু ফেলে আমাকে ভালোবেসেছিলে। স্মরণ করেন সেই মৃত্যুর সময়ের কথা। যেই সুন্দর জামা পরিধান করেছিলেন, ঐ জামা আর কেউ আপনাকে পরতে দিবে না। যেই কাপড় এত পছন্দ ছিল, ঐ কাপড় আর কেউ পরতে বলবে না। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে সন্তান বলবে না- আমার মা। বলবে আমার মায়ের লাশ। স্বামী বলবে না- আমার স্ত্রী, স্ত্রী বলবে না- আমার স্বামী। বলবে আমার স্বামীর লাশ। নাম নাই, সবাই লাশ হয়ে যায়। মানুষ আর বলতে পারবে না, এটা খেতে চাই, ওটা খেতে চাই। শুধুই শুয়ে থাকবে নিথর একখানা দেহ। কোনো শক্তি নাই ঐ দেহে। বিনা শক্তিতে একেবারে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে একটা দেহ। নিজে চলার ক্ষমতা নাই। এত মহব্বতের দালান তৈরি করেছেন, দেখেনতো ঐ দালানের ভিতরে আর আপনাকে রাখে কিনা, রাখবে না। উঠানে শুইয়ে দিবে। এত সুন্দর জামা বিছানা চাদর, জাজিম, আরাম করার জন্যে বালিশ। কোনো কিছু নসিব হবে না। শুইয়ে দিবে কাঠের তকতায়। খাটিয়ায় করে জানাজা পড়িয়ে অন্ধকার কবরে নামিয়ে দেওয়া হবে। স্ত্রী সন্তান ছেলে-মেয়ে ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন কান্না করবে সত্য, কিন্তু আপনার সাথে কেউ যাবে না। অন্ধকার কবরে সাদা কাফনের কাপড় পড়িয়ে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে চলে যাবে। আপনি রয়ে যাবেন একা ঘরে। কেউ সাহায্যের নাই। তবে হ্যাঁ। তিনি ব্যতিরেকে, যিনি অলী-আল্লাহকে পেয়েছেন। যিনি আল্লাহর বন্ধুকে পেয়েছেন। যিনি তার জীবনের সময় থেকে ঐ আল্লাহর বন্ধুর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিলেন, তিনি ব্যতিরেকে। তখন ঐ আল্লাহর বন্ধু বলবে, বাবা তোমার কি মনে আছে? তুমি আমাকে ভালোবেসে কত পরিশ্রম করেছিলে। তোমার জীবনে তোমার মা বিরোধিতা করেছে, তোমার ভাই বিরোধিতা করেছে, স্বামী করেছে, স্ত্রী করেছে, সমাজ করেছে তবুও বলেছ, আমি দেওয়ানবাগীকে চাই। আমি দেওয়ানবাগীকে ভালোবাসি। দুনিয়ার কাজ দুনিয়ার মায়া ফেলে তুমি অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলে আমাকে পাবার আশায়। দুনিয়ার সবাইকে ছেড়ে দিয়ে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলেছিলে, আমি তোমাকে চাই, আমি তোমাকে চাই, আমি তোমাকে চাই। ঐ মোর্শেদ তখন মুরিদকে সাহায্যের জন্যে ঐ অন্ধকার কবরে ছুটে যায়, বলে বাবা তুমি অন্ধকারকে ভয় পেয়ো না, আমি আছি। তিনি হযরত রাসুল (সা.)-কে নিয়ে আসবেন এবং বলবেন, ওগো দয়াল রাসুল (সা.), দেখেন সে আশেকে রাসুল ছিল, আমি আপনার কাছে তাঁর জন্য সুপারিশ করছি।

মোর্শেদ মানব জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন। যারা বুঝেননি মোর্শেদ কী, তাদেরকে বলতে চাই। মোর্শেদ শুধু পথ প্রদর্শক নয়। মোর্শেদ ঐ পথে পৌঁছানোর জিম্মাদারও বটে। তাই আপনি আল্লাহর বন্ধুকে পেলেন, অথচ তাঁকে নিজের অন্তরে বসাতে পারলেন না। আপনি আল্লাহর বন্ধুকে পেলেন, অথচ তাঁর চরিত্র নিজে ধারণ করতে পারলেন না। আপনি আল্লাহর বন্ধুকে পেলেন, অথচ তাঁর শিক্ষায় নিজে শিক্ষিত হতে পারলেন না। তাহলে আপনিতো উপকৃত হবেন না। বরঞ্চ আপনার জন্য লানত। কারণ আপনি অলী-আল্লাহকে পেয়েও নিজেকে চরিত্রবান করতে পারেননি। যে সন্ধান পায়নি তার জন্য এক হিসাব। আর যে পেয়েও নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেনি তার জন্য হিসাব আরও কঠোর। তাই ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ করছি, এখনও সময় আছে নিজেকে পরিবর্তন করার। সময় হারিয়ে যায়নি। এখন বলবেন আমার বয়স নেই! আমি বলছি কত বয়স আপনার? ষাট, সত্তর, আশি, একশ? আপনি এখন তওবা পড়েন, আমার সাথেই তওবা পড়েন যে, আমি ক্ষমা পেতে চাই। আল্লাহর কসম, যদি মন থেকে চান, চাওয়ার মতো চান। আপনি ঐ মালিককে ক্ষমাশীল পাবেন। অতএব তওবা শুরু করেন। এখন থেকে নিজেকে তৈরি করেন আশেকে রাসুল হওয়ার জন্য। পরনিন্দা পর সমালোচনা ত্যাগ করেন। নিজের নিন্দা করেন। নিজেকে দেখেন আমার মধ্যে কী ভুল আছে। অপরের ভুল না ধরে নিজের ভুল সংশোধন করেন। তিনিই আশেকে রাসুল, যিনি নিজের দোষকে সংশোধন করতে পারেন।

সম্মানিত আশেকে রাসুল ভাই ও বোনেরা! সারাটা জীবন গোলামি করেছি। গোলামির স্বাদ খুবই শান্তির। এখন সহস্রাধিক আশেকে রাসুলের কাছে কথা বলতে হয়। আমি গোলাম আছি, গোলাম থাকব, বাকি জীবন এই মোহাম্মদী ইসলামে গোলামি করে যাব। খানকাহ শরীফ নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করব খুব শীঘ্রই খানকা শরীফ, দরবার শরীফ পরিচালনার একটি নীতিমালা আপনাদের কাছে পৌঁছাতে। প্রত্যেকটা খানকা, দরবার, মজলিসে একটা করে ট্রেনিং সেন্টার চালু হবে। যেখানে আমরা মোরাকাবা শিক্ষা দিবো, যেখানে আমরা আল্লাহকে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দিবো, যেখানে আমরা রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দিবো। আপনি যদি জগতে বসে আল্লাহকে দেখতে পারেন, আপনি যদি জগতে বসে রাসুল (সা.)-কে দেখতে পান, আপনি কি দেখবেন না? দেখতে হবে আপনাকে। এই দেখার ট্রেনিং সেন্টার আমি খুব শীঘ্রই চালু করার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমি সকল আশেকে রাসুল ভাই ও বোনদের সহযোগিতা চাই। আমার ভাই-বোনরা আমাকে সহযোগিতা করছেন, আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। আমরা সবাই মিলে যাতে এই মোহাম্মদী ইসলামটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগী তাঁর সন্তানদেরকে রেখে গেছেন এবং সন্তানদের সাথে সাথে তিনি তাঁর আত্মার সন্তান তিন কোটি আশেকে রাসুল রেখে গেছেন। তাই আমরা চেষ্টা করব, জানিনা আল্লাহ কতটুকু সুযোগ দিবেন। তবে চেষ্টা করতে তো দোষ নাই। আমরা চেষ্টা করব আমাদের বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান দিয়ে। আপনাদেরকেও চেষ্টা করতে হবে যে, আমরা যে শিক্ষাগুলো দিচ্ছি, এই শিক্ষাগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করে নিজেদের চরিত্রকে সংশোধন করতে। যারাই জ্ঞান দিবেন তাদের প্রত্যেকের কাছে অনুরোধ করি। যারাই নেতা হচ্ছেন, তাদের কাছে অনুরোধ করি; যারাই পরামর্শদাতা হচ্ছেন, তাদের কাছে অনুরোধ করি; যারা সমন্বয়ক হচ্ছেন, তাদেরও বলছি। আগে নিজেকে প্রশ্ন রাখেন, আপনি কি আশেকে রাসুলের চরিত্রে চরিত্রবান? যদি এখনও না হোন, এখন থেকে চরিত্রবান হন। কারণ আপনাকে দেখে দেওয়ানবাগীকে বিচার করবে। আয়নায় দেখলে যেমন আপনি নিজেকে দেখেন, তেমনি আপনার মাঝে মানুষ দেওয়ানবাগীকে দেখে। আপনাকে দেখলে বলে, দেখ ঐ যে দেওয়ানবাগী। বলে না দেওয়ানবাগীর মুরীদ, আপনাকে দেওয়ানবাগী বলে। ঐ দেওয়ানবাগীর চরিত্র না থাকলে মোর্শেদের মোহাম্মদী ইসলামের ইজ্জত আপনি ডুবালেন। আপনাকে দেওয়ানবাগীর চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে। তাহলেই মোহাম্মাদী ইসলাম অগ্রসর হবে। আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন আপনাদেরকে দেওয়ানবাগীর চরিত্রে চরিত্রবান করার সুযোগ করে দেন। আমি দোয়া করি আল্লাহ যাতে আপনাদের বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত, অভাব-অনটন, দূর করে দেন। যারা দেশে-বিদেশে আছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যাতে সবাইকে হেফাজত করেন।


হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন- বান্দা আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসলে, আমি তার দিকে দশ পা এগিয়ে আসি। তাই আমরা সবাই যদি নিজেরা একটু একটু করে ছাড় দিয়ে এই মোহাম্মাদী ইসলামকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাই, ইনশাআল্লাহ! এই মোহাম্মদী ইসলামও আগাবে, আর আপনাদের চরিত্রও সংশোধিত হবে। আমি সকলের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যাতে আপনাদের সবাইকে কবুল করে নেন এবং আপনাদেরকে নুরে ইমান ভিক্ষা দেন, যাতে আপনারা আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর চরিত্রে চরিত্রবান হোন, হযরত রাসুল (সা.)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারেন, আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারেন। আমিন।


মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বক্তব্য শেষে সকলের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন।
বাদ জুমা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আয়োজিত সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিল উপস্থাপনা করেন- অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া।

7 COMMENTS

  1. ওগো দয়াময়,, আমরা পাপি গোলাম সব সময় যেন আপনার নির্দেশিত পথে নিজেদের পরিচালিত করতে পারি দয়াকরে সেই সুযোগ ভিক্ষা দিন,,, আমিন।

  2. মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব দানকারী দয়াময় মেজো সাহেবজাদা হুজুরের দিকনির্দেশনায় আরও একদাপ এগিয়ে।
    ,,,শুকরিয়া,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here