ড. পিয়ার মোহাম্মদ
মহান আল্লাহ্ ছিলেন গুপ্ত ধনাগারে। তাঁর নিজকে প্রকাশ করার বাসনা জাগায় তিনি মানুষ সৃষ্টি করলেন। মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন দিয়ে দুনিয়ার প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর দেহ তৈরি করে তাঁর ভেতরে নিজের রূহ থেকে রূহ ফুঁকে দেন। মহান আল্লাহ্ প্রকৃতপক্ষে প্রথমে তার রূহ থেকে নুরে মোহাম্মদী সৃষ্টি করেন। সে নুরে মোহাম্মদী থেকে মানুষসহ সৃষ্টি জগতের সব কিছুই সৃজিত হয়। হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাঁরই ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তায়ালা মা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। তাঁদের দুজনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানুষ জাতির উদ্ভব ঘটেছে। মানুষকে আল্লাহ্ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সৃজন করেছেন। সে মানুষ যদিও অনেক ক্ষেত্রেই বেমালুম আল্লাহ্কে ভুলে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে, তবুও এ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর রহমতের শেষ নেই।
তিনি মানুষ সৃষ্টির পর তাঁকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন। সব ফেরেশতা আদম (আ.)-কে সিজদা করলেও ইবলিশ (যিনি ফেরেশতাদের শিক্ষক ছিলেন) সিজদা করলেন না। তিনি মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় শয়তানে পরিণত হলেন। ইবলিশ আদম (আ.)-এর কারণে আল্লাহর অনুগ্রহ হারালেন বিধায়, সে থেকেই তার আদম (আ.)-এর উত্তরসুরিদের সাথে শত্রুতা শুরু হয়। মহান আল্লাহ্ মানুষকে সেই শত্রুতা থেকে রক্ষা করার জন্যও উদগ্রীব। সেদিন ইবলিশ বলেছিল- হে আল্লাহ্! আমি প্রতিনিয়ত আপনার বান্দাদেরকে ধোঁকা দিতে থাকব, যতদিন তাদের দেহে রূহ থাকবে। উত্তরে আল্লাহ্ বললেন- আমার ইজ্জত ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ! আমিও তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যতদিন তারা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহর কি রহমত মানুষের জন্য, ভাবলেও শান্তি পাওয়া যায়।
আল্লাহ্ এতই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু যে, ফেরেশতারা সব সময় তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে পৃথিবীবাসীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে চলেছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ তোমাদের হৃদয়ে এমন এক নুর দান করবেন, যে নুরের সাহায্যে তোমরা আল্লাহর পথে চলবে, আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। তিনি পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭: আয়াত ২৮) মহান আল্লাহ্ চান মানুষ পূণ্যময় কর্মের দ্বারা পুরস্কার লাভ করুক। আর পাপ কর্ম করে ফেললে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। মু’মিনগণ হযরত রাসুল (সা.)-এর সুপারিশে আল্লাহর করুণা লাভ করবেন। মহান আল্লাহ্ সেজন্য বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহ্ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবির প্রতি দরূদ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ তোমরাও নবির প্রতি দরূদ পাঠ করো এবং তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে সালাম জানাও।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ : আয়াত ৫৬) এমনিভাবে মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এঁর প্রতি দরূদ, সালাম ও মিলাদের নির্দেশনা দিয়ে বান্দাদের লাভবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। অসীম সে মহান আল্লাহর রহমত, যিনি আমাদের একমাত্র মালিক।
মহান আল্লাহ্ আল-গাফূর নাম ধারণ করে মানুষের প্রতি পরম ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী হিসেবে বিদ্যমান আছেন। তিনি তার এ গুণের কথা আল কুরআনের ১৮৩ জায়গায় বিভিন্ন আঙ্গিকে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন বান্দার জন্য তাঁর ক্ষমার দরজা সব সময় উন্মুক্ত। প্রকৃতপক্ষে মহান প্রভুর ক্ষমা অসীম, যা জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত। কেউ যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়ে তাঁর দরজায় হাজির হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ্ বলেন- “আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে আমার ঐ বান্দার সামনে হাজির হই এবং তাকে ক্ষমা করে দেই। কেউ যদি মহাসমুদ্রের সংখ্যাতীত ঢেউসম গুনাহ করে অতঃপর স্মরণ করে যে, আমার একজন মহান প্রভু আছেন, যিনি আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করতে সক্ষম, তবে এ মহাপাপীও আমার ক্ষমা পাবে।’’ পরম ক্ষমাশীল আল্লাহ্ এমনই মহান যে, তিনি মহাপাপীকে যেমন ক্ষমা করে থাকেন, তেমনি তাঁর বান্দারা ছোটখাট যে পাপ করে থাকে, সে অপরাধও তিনি নিজগুণেই মার্জনা করেন।
মহান আল্লাহ্ জানেন মানুষ পাপ করবে, সেজন্য তিনি তার মর্যাদাবান প্রতিনিধি মানুষের জন্য রেখেছেন অসীম ক্ষমার সুযোগ। মহান আল্লাহ্ প্রত্যেক মানুষকেই মানবীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টির সেরা করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “অবশ্যই আমি মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা তীন ৯৪ : আয়াত ৫) আমাদের নফ্স আছে বলেই আমরা মর্যাদাবান এটা আমাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। আমদের মনে রাখতে হবে আমরা নফ্স-এর সাথে বসবাস করব, কিন্তু নফ্স যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে। আমরা আস্তে আস্তে নফ্সকে বশ করব, যে নফ্স আমাদের বিভ্রান্ত করে সে যেন আমাদের সহায়তা করে, সে অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই আমরা সফল হব। সেটাই আমাদের কাজ এবং সেখানেই সফলতা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সে কাজটি কিভাবে করতে হবে তাও শিক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন। এটাই আমাদের প্রতি মহান প্রভুর গুরুত্বপূর্ণ রহমত।
মহান আল্লাহর যে পরিমাণ রহমত রয়েছে তার একভাগ সারা সৃষ্টি জগতের মধ্যে বন্টন করেছেন তাতেই পৃথিবীতে পারষ্পারিক কত মহব্বত। মানুষ মানুষের জন্য জীবন দেয়। তাহলে সহজেই বুঝা যায়, মহান আল্লাহর রহমত কত বেশি। যিনি সৃষ্টি করেন তাঁর নিজ সৃষ্টির প্রতি মহব্বত বেশি থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। মহান আল্লাহর একশতটি গুণবাচক নাম রয়েছে যার মধ্যে নিরানব্বইটিই তাঁর দয়া ও মেহেরবানীর অর্থ বহন করে। শুধু মাত্র একটি নাম কাহ্হার যার অর্থ কঠিন বিচারক। অবশ্য তাতেও ভয়ের কিছু নেই, কারণ তিনি কারো প্রতি অবিচার করেন না। যার প্রতি কঠিন হওয়ার দরকার, কেবলমাত্র তার প্রতিই তিনি কঠিন হন। মহান আল্লাহ্ শুধু র্শিক করলে, পাপের ক্ষমা করেন না। তিনি বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। তবে তিনি এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৮) সেজন্য আমাদের উচিৎ মহান আল্লাহর সেই রহমত কামনা করা যেন তিনি আমাদের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তিনি যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন, যত পাপীই হোক না কেন।
মানুষের ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। সে ভুলের মাফ পাওয়ার নিমিত্তে মহান আল্লাহর রহমত লাভের জন্য তাঁর নিকট ক্ষমা ও দয়া ভিক্ষা চাইতে হয়। এজন্য হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “তোমরা অনন্তকাল ধরে আল্লাহ্র নিকট কল্যাণ কামনা করতে থাক। আর তার রহমতের সুবাস পাওয়ার জন্য দরখাস্ত পেশ করতে থাক। কেননা এর নিয়মতের অধিকারী সেই হতে পারে, যাকে আল্লাহ্ ই্চ্ছা করেন।’’ (তাফসীরে ইবনে কাছীর-২য় খন্ড)। সর্বাবস্থায় ক্বালবে আল্লাহর খেয়াল রেখে পথ চলতে হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। ক্ষমা চাওয়াকে মহান আল্লাহ্ খুবই পছন্দ করেন এবং খুশি হন। ক্ষমা চাইতে থাকলে যখনই দয়াময়ের ইচ্ছা হবে, তখনই ক্ষমাপ্রার্থীর জীবনে আল্লাহর রহমত নেমে আসবে। এ পথ কঠিন হলেও কখনো হতাশ হতে নেই। মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে রাসূল (সা.)! আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, তোমরা যারা নিজেদের নফ্সের উপর অবিচার করেছ, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনিতো পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়।’’ (সূরা আঝ ঝুমার: আয়াত ৫৩) আল্লাহর রাসুল (সা.) এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- মানুষ যদি অন্যায় না করত তাহলে আল্লাহ্ এ জাতিকে ধ্বংস করে দিয়ে আরেক জাতি সৃষ্টি করতেন। তাতে বুঝা যায় মানুষ অন্যায় করবে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এবং মহান আল্লাহ্ ক্ষমা করে খুশি হবেন, এটাই উদ্দেশ্য। সেজন্য হাজারো পাপ করেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
মানুষ কিভাবে ক্ষমার মাধ্যমে মুক্তি পাবে সে চিন্তা মহান আল্লাহ্ সব সময় করে আসছেন। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি-রাসুল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছা মানুষ তাঁর একত্ববাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী থেকে তার কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সফলকাম হবে। সকল নবি ও রাসুল মানুষের কাছে আল্লাহ্ পাকের একই বাণী নিয়ে এসেছেন। পাপীতাপি মানুষ তাদের সোহবতে থেকে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তাদের মু্িক্তর ব্যবস্থা হয়ে গেছে। হাদীসে বর্ণিত আছে- “আনা খাতামুন নাবিয়্যিন লা নাবীয়্যাবাদী” অর্থাৎ- আমি শেষ নবি, আমার পর আর কোনো নবি আসবেন না। এ সম্পর্কে সাহাবিদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- “আশ্শাইখু ফী কাত্তমিহি কান্নাবিউ ফী উম্মাতিহী” অর্থাৎ- নবি তার উম্মতের কাছে যেরূপ শায়েখ বা মোর্শেদ তার জাতির কাছে তদ্রূপ। এর অর্থ- হযরত রাসুল (সা.) এর পরবর্তী এ বেলায়েতের যুগে নায়েবে রাসুল অলী-আল্লাহ্গণ মোর্শেদরূপে কাজ করবেন। বর্তমান বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে। পবিত্র কুরআনে এ সকল অলী-আল্লাহর মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘হে বিশ্বাসীগণ, আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সত্যাশ্রয়ীদের সঙ্গ লাভ করো। সেজন্য মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধানমতেই মানুষকে মোর্শেদের কদম মোবারকে চাতক পাখির ন্যায় আল্লাহ্র রহমতের আশায় অপেক্ষা করতে হয়। এভাবেই মহান প্রভুর রহমত লাভ করা যায়।
আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য তাসাউফ বিদ্যায় বিদ্বান মোর্শেদের দরবারে গিয়ে নির্দেশমতে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই রহমতের বৃষ্টি নেমে আসে মানব জীবনে। একমাত্র আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমেই দিল জিন্দা করা যায় এবং ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “যাদের ক্বালব আল্লাহর জ্বিকির থেকে গাফেল রয়েছে, তারা প্রকাশ্য গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট।” (সূরা যুমার: আয়াত ২২) পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে, “তোমরা যখন নামাজ শেষ করো তখন দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জ্বিকির করো।” (সূরা নিসা ৪ : আয়াত ১০৩) বর্তমান যূগে এ কাজ করে যাচ্ছেন যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। তাঁর কদম মোবারকে এসে হাজার হাজার মানুষ সফলকাম হচ্ছেন।
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যুগের মোজাদ্দেদ হিসেবে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশিত পথে সাধনা করে আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসূল হওয়ার মাধ্যমে সফল হচ্ছেন পাপীতাপি মানুষ। তার নির্দেশিত পথে ধ্যান করে অনেকে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করছেন। তাঁর দরজা সকল মানুষের জন্য খোলা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমরা যেন তাঁর সাহচর্যে থেকে মহান আল্লাহ্র রহমত ও বরকত হাসিল করে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
আলহামদুলিল্লাহ্, মারহাবা ইয়া যুগের ইমাম বাবা দেওয়ানবাগী মারহাব।
আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লা।
হে আল্লাহ আমি যতই অপরাদ করি তুমি নিজ গুনে ক্ষমা করে দাও ।