বিজ্ঞান ডেস্ক: করোনা মহামারিকালে কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা এটি (আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘প্লসওয়ানে’ প্রকাশিত)। গবেষকরা বলেছেন, এ সময় বিশ্বে সূক্ষ্ম ধূলিকণা দূষণ কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্য দুই ধরনের বায়ুদূষণ কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে রেকর্ড মাত্রায় কার্বন নির্গমন কমেছে। এতে ধারণা করা যায়, করোনাকালে অর্থনৈতিক মন্দাও কার্বন নিঃসরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে! প্যারিস জলবায়ু চুক্তিমতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কী সম্ভব হবে? যদি করোনাকালের মতো আগামীতেও এমনভাবে কার্বন নিঃসরণ কম রাখা যায় তবু ঐ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে হয় না। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখতে ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর আরো ৩ শতাংশ করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোকে একটি রুলবুক বা নির্দেশনা তৈরি এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০২১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কপ-২৫ সম্মেলন শেষে যে ফলাফল পাওয়া গেল, তাতে আমি হতাশ।’ বাস্তবতাও সেকথা বলছে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আজ বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর মানুষ ১০ ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। গত ১ দশকে বরফ গলার হার ৪ গুণ বেড়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর স্থলভাগ। ফলে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে যেসব উপকূলীয় দেশ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে সেসব দেশের প্রথম সারিতে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১৯ সালে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে’ বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৭ নম্বরে। উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর জন্য দায়ী উন্নত দেশসমূহের মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমন।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে ঋতুচক্র বদলে গেছে। হিমবাহের বরফ গলছে, সমুদ্র উত্তপ্ত হচ্ছে, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিব্যবস্থা, স্থানচ্যুত হয়ে মানুষ অভিবাসী বা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জীবনব্যবস্থা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শত বছরের মহাপরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান, ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে ১২ সদস্যের ‘ডেল্টা গভর্নেন্স কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকে অভিশাপের বদলে আশীর্বাদে পরিণত করতে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
দেশে দেশে জলবায়ু দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না। যা হোক, প্রত্যেক দেশকে নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করে যেতে হবে। উন্নত দেশসমূহের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে এক কাতারে এসে আরো বেশি চাপ তৈরি করতে হবে। এছাড়া উন্নত দেশসমূহকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্বন নির্গমন কমানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাড়াতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। প্রতিটি শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একযোগে কা