যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা। এটি কমপক্ষে এক থেকে দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে বাড়বে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যতদ্রুত সম্ভব ‘লকডাউন (অবরুদ্ধ)’ কার্যকরের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লিখিত অভিমত দেন বেশ কয়েকজন ভাইরোলজিস্ট (ভাইরাস বিশেষজ্ঞ) ও এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ)। তারা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানান, আগামী দুই সপ্তাহের পর ভাইরাসের তীব্রতা খুবই ধীরে ধীরে কমতে পারে। অর্থাৎ তীব্রতা কমলেও প্রকোপ থেকেই যাবে।
দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৩৪৩ জনে। এছাড়া একই সময়ে নতুন করে ৩ হাজার ৮০৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সর্বমোট এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত হলেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এ পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ৪৭ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন শেষ ১৫ দিনে। একইভাবে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে আক্রান্তের সংখ্যাও একই হারে বাড়বে। শনাক্ত না হওয়ায় অনেক রোগী এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করছেন। লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক ঘাটতি। এখনই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেক রোগীর। রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে তাঁদের ঠাঁই হবে কোথায়? তাই আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কিভাবে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
কোনো কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করছেন, বাংলাদেশে আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি রয়েছে, আর কয়েক দিনের মধ্যে লেখচিত্রের চূড়া নিম্নগামী হবে। তাঁরা আগামী দু-তিন সপ্তাহ সময়কে সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করছেন। তাঁদের মতে, এই সময়ে কঠোর লকডাউন ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করা গেলে আমাদের অনেক বেশি মূল্য চুকাতে হতে পারে। একই সময়ে জনগণকেও সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। কারো কারো মতে, বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ সরঞ্জাম ও ভেন্টিলেটরের গুরুত্ব অনেক বেশি। অথচ এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাই ফ্লো অক্সিজেন নেজাল ক্যানুলা থাকলেও ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন অনেক কমে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এরও সরবরাহ নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত এই ক্যানুলার সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে করোনা শনাক্তকারী পরীক্ষার সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে হবে। রোগী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগ ছড়াতেই থাকবেন। সুযোগ সীমিত থাকায় অনেকে দিনের পর দিন লাইন দিয়েও পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এটি কোনো দিক থেকেই কাম্য নয়। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সঠিকতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে সেসব দূর করতে হবে।
করোনাযুদ্ধে সরকারকে আরো সক্ষমতা দেখাতে হবে এবং সাধারণ মানুষকেও সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অচিরেই সফলভাবে করোনা মোকাবেলায় সক্ষম হব।