করোনায় প্রযুক্তি শিল্পের লাভ-ক্ষতি

0
219

লুৎফুল্লাহিল মাজিদ পরাগ

করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তা আমরা সকলেই অবগত। হয়তো অনেকেই ভেবেছিলো এটি তেমন বড়ো কোনো ব্যপার নয়, কয়েকমাস পরে আর থাকবেনা। যাইহোক বাস্তবতা ঠিক ভিন্ন। প্রযুক্তি মানুষ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও এটি কতটা মারাত্মক হতে পারে তা এখন সকলেই বুঝে উঠতে পেরেছে। প্রযুক্তি শিল্পেও এর প্রভাব কম নয়। সেদিকেই আলোকপাত করা যাক।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। অনেকেই সেটা নিয়ে চিন্তিত হলেও প্রযুক্তি শিল্পের দিকটা অনেকের কাছেই অজানা বা আগ্রহের বাহিরে।
বৈশ্বিক মন্দায়ও যারা ভালো করবে

স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সমস্ত সংস্থা অর্থ হারাবে এবং এই করোনাভাইরাস চলাকালীন সময়ে শেয়ারের দাম হ্রাস পাবে। এ স্বত্বেও কিছু কোম্পানী অতটা ক্ষতির সম্মুখিন হবে না। যদি সমস্ত সংস্থার শেয়ারের দাম ১০% কমে যায়, আর যদি সেখানে একটি সংস্থা থাকে, যার শেয়ারের দাম ৫% বা তার চেয়ে কম হ্রাস পায় তবে সেই সংস্থাটি একটি স্পষ্ট বিজয়ী। হ্যাঁ, এর দাম নিম্নমুখী হলেও অন্যের তুলনায় অনেক কম এবং যদি এই কোভিড-১৯ সংকট অব্যাহত থাকে তবে যাদের শেয়ার কম নিম্নগামী হবে সেই সংস্থাগুলি অবশ্যই খুব বেশি আর্থিক ক্ষতি ছাড়াই টিকে থাকবে।

যেসকল কোম্পানিগুলো তাঁদের পণ্য দ্বারা বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে যেমন ইউটিউব (গুগল), স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স এবং গেমিং শিল্পের সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর শেয়ার নিম্নমুখি হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। লকডাউনে থাকা মানুষের এখন প্রচুর অবসর সময়, ঘরে বসে অনলাইনে বিনোদনের সাইটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। নেটফ্লিক্সে প্রচুর চাপ পড়ছে। অতিরিক্ত ব্যবহারে ইন্টারনেট স্পিডও কমেছে খানিকটা। যদি কেউ শেয়ার কিনতে চায় তবে এই সকল সংস্থাগুলোর শেয়ার চোখ বুঝে কিনতে পারে। এদের শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকবে কমার সম্ভাবনা নেই ।

গেমিং সেক্টরেরও ভালো অবস্থা। আপনি ঘর থেকে বাহিরে যেতে পারছেন না। ভিন্ন অবস্থানে থেকেও খুব সহজেই বন্ধুদের সাথে গেমস খেলতে পারেন। এই সকল গেমিং সংস্থাগুলো পার্টি মোড সাপোর্ট যুক্ত করেছে যেন আপনি একাকীত্ব অনুভব না করেন। সুতরাং, ইএ, ইউবিসফ্ট, ব্লিজার্ড, রকস্টার্ট গেমসের মতো গেমিং সংস্থাগুলির আয়ের পরিমাণ হবে বিশাল অংকের।

যারা করোনার প্রভাবে লসে যাবে
সকল সংস্থাই লাভে থাকবে তা আশা করা ঠিক হবেনা। অনেক পণ্য আছে যেগুলো উৎপাদনের জন্য শ্রমিকদের শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতেই হয়। যেহেতু শ্রমিকরা সবাই বাড়িতে অবস্থান করছে সেহেতু তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিকরা যদি কাজ না করতে আসে তবে কীভাবে পণ্য উৎপাদিত হবে? এইসকল সংস্থাগুলো হলো, সকল গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা, ফোন, কম্পিউটার ও যাবতীয় ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক সংস্থা।

যারা লস হলেও ঘুরে দাঁড়াবে
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেহেতু চীন থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো এবং প্রায় সকল বিখ্যাত ব্র্যান্ডের প্রযুক্তি পণ্যই এখন চীন থেকে উৎপাদিত হয়, সেক্ষেত্রে অনলাইনে অর্ডার করলেও গ্রাহকগণ বোনাস হিসেবে করোনাভাইরাস পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই করোনায় ই-কমার্স ব্যবসায় শঙ্কা থাকলেও বাসায় অবস্থান করা কোটি কোটি মানুষের অর্ডার প্লেস হবার কারণে এগুলো ঘুরে দাঁড়াবে অল্প সময়েই।

এসময়ে লাভবান হতে পারে অনলাইন আইটি প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলো যারা বিভিন্ন শর্ট কোর্স অফার করে থাকে। লকডাউন পরিস্থিতিকে প্রডাক্টিভ কিছুতে কাজে লাগাতে চাইবে অনেকেই।

সবশেষে বলা যায়, করোনাভাইরাস সঙ্কট অবশ্যই প্রযুক্তি শিল্পকে প্রভাবিত করবে। নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, গেমিং সংস্থাগুলির মতো সংস্থাগুলি রাজস্ব আয়ের বিশাল বৃদ্ধি দেখতে পাবে, যেখানে স্যামসাং, অ্যাপল এবং গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির মতো কিছু সংস্থার রাজস্ব ব্যাপক হ্রাস পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here