করোনা তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জন্য আশীর্বাদ!

0
239

শিল্প ডেস্ক: করোনাকে তৃতীয় বিশ্বের জনগোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি। কারণ, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে উন্নয়নশীল দেশের অরক্ষিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি এই সব দেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সেটা হলো, এই বাস্তবতার আলোকে তারা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের পথে এগোতে পারবে। অর্থাৎ, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নতুন ধরনের সামাজিক নীতি ও মৌলিক সুরক্ষা জাল প্রণয়ন করতে পারে যা এসব দেশের জনগণের জীবনযাত্রা উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে।

ভারতের এনডিটিভির টাউন হল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’র লেখক ও ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি। পিকেটি বলেন, লকডাউন তো বেশি দিন চালানো যাবে না। মানুষের হাতে তো অত টাকা নেই। কাজ ও টাকার সন্ধানে তাদের বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বেরোতে হবে। এটাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের অনন্য সুযোগ মনে করেন তিনি। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেমন ঢেলে সাজাতে পারে, তেমনি গরিব মানুষকে টাকা দিয়েও সহায়তা করতে পারে।

কোভিড-১৯-এর মতো বড় ধরনের ধাক্কার পর রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তন আসে কি না, উপস্থাপক প্রণয় রায়ের এমন প্রশ্নের উত্তরে টমাস পিকেটি বলেন, ‘‘সে ধরনের সম্ভাবনা আছে। ইতিহাসে আমরা এই ধরনের অনেক বিস্ময়ের মুখোমুখি হয়েছি। সাধারণভাবে বললে, ‘ক্যাপিটাল অ্যান্ড আইডিওলজি’ বইটি লিখতে গিয়ে আমার যে শিক্ষণ হয়েছে তা হলো, দেশে দেশে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি নেওয়া হয় এবং অসমতা যে কারণ, তা যত না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক ও আদর্শিক। আর সেই আদর্শ হলো, আপনি কীভাবে অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন এবং কীভাবে তা পরিচালনা করেন। এই ধরনের বড় ধাক্কার পর সেটা আবার দ্রুতই বদলে যেতে পারে।’’

এই প্রসঙ্গে সুইডেনের কথা বলেন টমাস পিকেটি। তিনি বলেন, ১৯১১ সালের আগে দেশটি অত্যন্ত অসম ছিল। তখন ধনীরা সম্পদ অনুসারে অনেক ভোট দিতে পারতেন, যদিও গরিবদের ভোট ছিল একটি করে। এরপর ট্রেড ইউনিয়ন ও সামাজিক গণতন্ত্রীদের আন্দোলনের মুখে এই অসম ব্যবস্থার বদল হয়। তিনি আরও বলেন, ‘‘সেজন্য আমি বিশ্বাস করি না যে পূর্বনির্ধারিত বা সুনির্দিষ্ট পথেই শুধু বাস্তবতার পরিবর্তন হয়; বরং রাজনৈতিক আন্দোলন এবং কোভিড-১৯-এর মতো চ্যালেঞ্জের প্রতি মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’’

ক্ষমতার ভারসাম্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে পিকেটি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় প্রবৃদ্ধির হার সাময়িকভাবে কিছুটা কমলেও দীর্ঘমেয়াদে ভারত ও চীনের মতো দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ফলে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। আর্থিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, বিদেশি পুঁজি আনা, এসব ব্যাপারে ভারতের একার পক্ষে বিশেষ কিছু করা সম্ভব হবে না। সবার অংশগ্রহণ লাগবে। তবে সবাই এখন আরও সমতামূলক কর কাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন মডেলের দিকে ধাবিত হবে, সেটাই প্রত্যাশা করি।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here