চতুর্দশ শতাব্দীতে যখন ব্ল্যাক ডেথ পৃথিবীতে আঘাত করে, মানুষের কোনো ধারণাই ছিল না এর কারণ কী, এর বিরুদ্ধে কী করা যায়। এখনকার আধুনিক যুগের আগে মানুষ রোগের কারণ হিসেবে দায় চাপাতো দেবতার রাগ, খারাপ আত্মা কিংবা মন্দ বাতাসের উপর। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস যে এর পেছনে মূল কারণ হতে পারে, সে সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। মানুষ তখন ভূত-প্রেত, পরী, দানব এসবে বিশ্বাস করত, তাদের কল্পনাতেও ছিল না যে জলের ছোট একটা ফোঁটায় কী ভয়াবহ এক দানবের দল থাকতে পারে! এ কারণে যখন ব্ল্যাক ডেথ বা স্মলপক্স এল, সেটা ঠেকানোর জন্য কর্তৃপক্ষের মাথায় এলো নানা দেবতার কাছে প্রার্থনার কথা। ব্যাবস্থা করা হলো সমবেত প্রার্থনার। তাতে কোনো সমাধান অবশ্য হয়নি। হয়েছে উল্টোটা। যখন মানুষ এক জায়গায় জমায়েত হয়েছে প্রার্থনার জন্যে, জীবাণু আরও দ্রুত ছড়িয়েছে, বিস্তার হয়েছে সংক্রমণের।
গত শতাব্দীতে গোটা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, নার্সেরা এ ধরনের মহামারির বিষয়ে তথ্য জোগাড় করে একসাথে বোঝার চেষ্টা করেছেন মহামারির কারণটা কী এবং এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বিবর্তনবাদ দিয়ে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে, কীভাবে নতুন নতুন রোগের উদয় হচ্ছে আর পুরোনো রোগগুলো ফিরে আসছে আরো শক্তিশালী হয়ে। জিনেটিকসের কারণে বিজ্ঞানীরা এখন জীবাণুদের নিজস্ব ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়ালের ওপর নজরদারী করতে পারছেন। যেখানে মধ্যযুগের মানুষ জানতোই না ব্ল্যাকডেথের কারণটা কী, আর সেখানে এখনকার বিজ্ঞানীরা দু সপ্তাহের মধ্যে নোভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন। এর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ফেলেছেন এবং আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করার একটা নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাও বের করে ফেলেছেন।
যখনই বিজ্ঞানীরা ধরে ফেলছেন মহামারির কারণটা কী, তখনই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা সহজ হয়ে যাচ্ছে। টীকা দান কর্মসূচী, অ্যান্টিবায়োটিক, উন্নত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস এবং আগের চাইতে উন্নত মেডিকেল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ১৯৬৭ সালের দিকেও স্মলপক্সে ১৫ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিল ২ মিলিয়ন মানুষ। এর পরের দশকে সারা পৃথিবী জুড়ে স্মলপক্সের বিরুদ্ধে টীকাদান কর্মসূচী চললো পুরোদমে। পুরো কর্মযজ্ঞ এতোটাই সফল হয়েছিল যে ১৯৭৯ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ঘোষণা দিয়ে ফেললো যে স্মলপক্সের বিপক্ষে মানবতার জয় হয়েছে। জিতে গেছে মানুষ। পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে স্মলপক্স। তারপর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত একজন মানুষও স্মলপক্সে সংক্রমিত বা মারা যায়নি।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন