থ্যালাসেমিয়া: একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ

0
2832

ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)
আজ ৮ই মে, শুক্রবার বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। থ্যালাসেমিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এই রোগটির হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য আজ আমরা এই রোগটি সম্পর্কে কিছু জানবো।

থ্যালাসেমিয়া (Thalassaemia) কী?
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। দেহের লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন। থ্যালাসেমিয়া রোগে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য দায়ী যে জিন, সেই জিনের ত্রুটি থাকে। জিনগত ত্রুটির কারণে ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। এর ফলে লোহিত রক্ত কণিকা তার গড় আয়ুষ্কাল ৪ মাসের পূর্বেই ভেঙ্গে যায়।

থ্যালাসেমিয়া রোগের উপসর্গ কী?

  • এই রোগের প্রধান উপসর্গ রক্তস্বল্পতা যার ফলে শরীরের রঙ ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। রক্তস্বল্পতা ছাড়াও এই রোগে অন্যান্য আরও কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন :
  • শারীরিক দুর্বলতা ও অবসাদ অনুভূত হওয়া
  • যকৃৎ ও প্লীহা বড় হয়ে যাওয়ার ফলে পেট বড় হয়ে যাওয়া
  • শারীরিক বৃদ্ধি ধীরগতিতে হওয়া
  • পাশাপাশি হালকা মাত্রার জণ্ডিসও দেখা যায় এই রোগে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের কি কোনো প্রকারভেদ আছে?
থ্যালাসেমিয়া রোগটি অনেক ধরনের হতে পারে। তবে আমাদের দেশে মূলত ২ ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগী বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

  • বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর
  • ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া

একই ভাবে আমাদের দেশে সাধারণত ২ ধরনের থ্যালাসেমিয়ার রোগের বাহকও বেশি পাওয়া যায়।
বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক(Beta thalassaemia minor or trait) এবং
হিমোগ্লোবিন-ই এর বাহক (Haemoglobin E trait)|।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের দেশে বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে শতকরা ৪.১ জন এবং হিমোগ্লোবিন-ই এর বাহক রয়েছে শতকরা ৬.১ জন।

থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা ট্রেইট কী?
যে রোগীর মাঝে মাঝারী থেকে মারাত্মক পর্যায়ের রক্তস্বল্পতাসহ থ্যালাসেমিয়া রোগের অন্যান্য উপসর্গগুলো বিদ্যমান থাকে তাকে বলে থ্যালাসেমিয়া মেজর।

অপরদিকে, কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট-এর মানে হলো সেই ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। সামান্য রক্তস্বল্পতা ছাড়া আর তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট এ। যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক তারা সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মতোই জীবন-যাপন করতে পারে।

তবে থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের সামান্য রক্তস্বল্পতা ছাড়া যেহেতু আর তেমন কোনো উপসর্গ থাকেনা, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই বাহকরা নিজেরাই জানেন না যে তিনি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক।

এই কারণে বিয়ের পূর্বে প্রত্যেকের রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিৎ যে সে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কিনা। কারণ, একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক যদি অপর একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহককে বিয়ে করে তাহলে তাদের সন্তানদের কেও থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নিতে পারে। সুতরাং, দুইজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হওয়া উচিৎ নয়। তবে স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনো একজন বাহক হলে বিয়ে করতে কোনো বাধা নিষেধ নেই।

একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক যদি আরেকজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহককে বিয়ে করে তাহলে তাদের সকল সন্তানদের কী থ্যালাসেমিয়া রোগটি হবে?
একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক যদি আরেকজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহককে বিয়ে করে সেক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগটি হতে পারে। তবে জন্ম নেয়া সকল সন্তানদেরই যে থ্যালাসেমিয়া রোগটি হবে তা নয়। দুইজন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের থেকে আগত প্রতিটি সন্তানের শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, ৫০% সম্ভাবনা থাকবে সেই সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট হিসেবে জন্ম নেবার এবং বাকী ২৫% ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকবে সেই সন্তান একদম সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম নেবার।

একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক যদি একজন সুস্থ মানুষকে বিয়ে করে তাহলে তাদের সন্তানদেরও কি থ্যালাসেমিয়া রোগটি হতে পারে?
একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক যদি একজন সুস্থ মানুষকে বিয়ে করে তাহলে তাদের সন্তানদের কারও থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগটি হবে না। তবে সেক্ষেত্রে তাদের থেকে আগত প্রতিটি সন্তানের ৫০% ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট হয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকবে এবং ৫০% ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হিসেবে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকবে। আর যেহেতু যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তারা সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মতোই জীবন-যাপন করতে পারে। সুতরাং, একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক একজন সুস্থ মানুষকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।

থ্যালাসেমিয়া রোগটি কী প্রতিরোধ করা সম্ভব?
হ্যাঁ। থ্যালাসেমিয়া রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। আগেই বলেছি যে ২ জন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহকের মাঝে যদি বিয়ে হয় তাহলেই কেবল তাদের থেকে আগত সন্তানদের এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি হতে পারে। তাই প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে ২ জন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহকের মধ্যে বিয়ে না হওয়া এবং এইজন্য বিয়ের পূর্বেই একজন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস নামের একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিৎ। কারণ, সামান্য রক্তস্বল্পতা ছাড়া আর কোনো উপসর্গ না থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগের একজন বাহক নিজেই জানেনা যে সে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক।

এর পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধের অন্যতম পদক্ষেপ হলো আপন খালাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাই-বোনের নিজেদের মধ্যে বিয়ে না করা। কারণ, থ্যালাসেমিয়া যেহেতু একটি বংশগত রোগ, তাই দেখা যায় যে একই বংশের অনেকেই এই রোগের বাহক হিসেবে থাকতে পারে যা হয়তো সেই ব্যক্তি নিজেই জানেনা। আর যেহেতু ২ জন বাহকের মধ্যে বিয়ে হলেই কেবল এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি হয়। এজন্য যদি আপন খালাতো, ফুফাতো, মামাতো, চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে যদি বিয়ে না হয়, তাহলে থ্যালাসেমিয়া সহ আরও কিছু বংশগত রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দুই জন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের মধ্যে যদি বিয়ে হয়, সেক্ষেত্রে করণীয় কী?
দুর্ভাগ্যবশত দুই জন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের মধ্যে যদি বিয়ে হয়েই যায় অথবা বিয়ের পর কোনোভাবে জানা যায় যে স্বামী-স্ত্রী ২ জনই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের পর মাতৃ জঠরে থাকা ভ্রুণ পরীক্ষা করেও বলা সম্ভব যে তাদের সেই অনাগত সন্তানটি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কিনা। এই পরীক্ষাকে বলে প্রি-ন্যাটাল ডায়াগনোসিস (Pre-natal diagnosis). এই ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ১০-১১ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রুণের কোরিওনিক ভিলাই পরীক্ষা (Chorionic villi sampling)-এর মাধ্যমে অথবা ১৫ সপ্তাহের পরে মাতৃ জঠরের পানি পরীক্ষা (Amniocentesis) করে গর্ভের সেই সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কিনা তা জানা সম্ভব। সেই ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে গর্ভের সেই সন্তানটি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, তাহলে সেই ভ্রুণ রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের একান্ত নিজের।

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী?
থ্যালাসেমিয়া রোগে জিনগত ত্রুটির কারণে হিমোগ্লোবিন ত্রুটিপূর্ণভাবে তৈরি হয়। ফলে রক্তে লোহিত কণিকার উৎপাদন ভালোভাবে হয় না। আর যতটুকু লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয় তাও অকালে ভেঙে যায়। যার ফলাফল- রক্তস্বল্পতা।

আবার হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান হলো আয়রন। অকালে ভেঙে যাওয়া এসব লোহিত রক্ত কণিকা থেকে নির্গত আয়রন শরীরের নানা অঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমা হতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত এই আয়রন ধীরে ধীরে জমার কারণে এসব অঙ্গের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। যেমন : হার্ট ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্রন্থিতে সমস্যার কারণে দেরীতে বয়ঃসন্ধি (Puberty) এবং অপর্যাপ্ত দৈহিক বৃদ্ধি ইত্যাদি।

এই কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা করা হয় মূলত এই দুইটি সমস্যা (রক্তস্বল্পতা ও শরীরে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়া)-কে লক্ষ্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরিসঞ্চালন এবং শরীর থেকে আয়রন কমানোর ঔষধ সেবনই থ্যালাসেমিয়া রোগের মূল চিকিৎসা। এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হবার ফলে পরবর্তীতে যেসব জটিলতা তৈরি হয় তারও চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

তাছাড়া যেসব রোগীর প্রায় প্রতি মাসেই রক্ত দিতে হয় তাদের জন্য আরেকটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি হলো বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অথবা স্টিম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন। তবে এই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বেশ ব্যায়বহুল এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আমাদের দেশে শুরু হয়নি।

থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসায় কি প্রতি মাসেই রোগীকে রক্ত দিতে হয়?
থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন পরপর রক্ত নিবে তা নির্ভর করে সে কোন ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত তার উপর। যদি সে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৯ গ্রাম/ ডেসি লিটার এর উপর রাখতে হয়। এদের রক্ত কণিকা তুলনামূলক তাড়াতাড়ি ভাঙ্গে। তাই এদের সাধারণত ২ থেকে ৫ সপ্তাহ পরপর রক্ত নেবার প্রয়োজন পরে।

আবার দেখা যায় যে হিমোগ্লোবিন ই বিটা থ্যালাসেমিয়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সাধারণত ৬ গ্রাম/ ডেসি লিটার এর নীচে না নামলে রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। তাই তাদের কয়েক মাস পর পর রক্ত দিলেও চলে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তের অন্যান্য উপাদান পৃথক করে শুধুমাত্র লৌহিত কণিকা বা রেডসেল দিতে হয়, সম্পূর্ণ রক্ত দিতে হয়না।

থ্যালাসেমিয়া রোগের মূল উপসর্গ যেহেতু রক্তস্বল্পতা, এক্ষেত্রে আয়রন জাতীয় ঔষধ সেবন করে এর চিকিৎসা করা যাবে কী?
বাচ্চাদের বিভিন্ন কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রক্তস্বল্পতার কারণ হিসেবে দায়ী থাকে আয়রন বা লৌহের ঘাটতি। তাই সেই ক্ষেত্রে আয়রন জাতীয় ঔষধ সেবন করলেই আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং রক্তস্বল্পতাও দূর হয়। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া রোগে আয়রনের ঘাটতি হয় না বরং এই রোগে শরীরে আয়রনের আধিক্য ঘটে। এই রোগে অধিক পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা ভাঙতে থাকে এবং এসব লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে এর হিমোগ্লোবিনের মাঝে থাকা আয়রন বের হয়ে আসে এবং তা ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমা হতে থাকে। তাই এই রোগের চিকিৎসায় আয়রন জাতীয় ঔষধ ব্যাবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

তবে যারা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক এবং যাদের উপসর্গ হিসেবে সামান্য রক্তস্বল্পতা থাকে, তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সিরাম আয়রন, সিরাম ফেরিটিন ইত্যাদি পরীক্ষা করে যদি শরীরে আয়রনের ঘাটতি পাওয়া যায়, তবে সাময়িক সময়ের জন্য তাদের আয়রন জাতীয় ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হয়।

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের খাবার কেমন হবে?
থ্যালাসেমিয়া রোগে যেহেতু শরীরে আয়রন জমা হয়ে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে তাই যে সকল খাবারে অধিক পরিমাণে আয়রন আছে সেগুলো পরিহার করতে হবে এবং যেসব খাবারে কম পরিমাণ আয়রন আছে সেসব খাবার খেতে হবে।

খাদ্য সামগ্রীর নামতুলনামুলক অধিক আয়রনযুক্ত খাবারতুলনামুলক কম আয়রনযুক্ত খাবার
মাছ, মাংস জাতীয় খাবারগরুর মাংস, খাসীর মাংস, কলিজা, ইলিশ, কৈ, চিংড়ি, চিতল, টেংরা, ছোট মাছের শুটকি, ডিমের কুসুমরুই, কাতলা, পাংগাস, বোয়াল, মাগুর, শোল ও ডিমের সাদা অংশ
শাক-সবজিকচুশাক, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, শিম, বরবটি, কাঁকরোল, কাঁচা পেপে, সজেনা, কাঁচা টমেটোবাঁধাকপি, মিষ্টি আলু, করলা, মিষ্টি কুমড়া, মূলা, শালগম, লাউ, চাল কুমড়া, কাঁচাকলা, পাকা টমেটো
ফলআনারস, বেদানা, খেজুর, তরমুজপাকা আম, লিচু, পাকা পেপে, পাকা কলা, কমলা লেবু, আপেল, বেল, জামরুল, আঙ্গুর
ডালছোলার ডালমসুর ডাল
অন্যান্য খাবারগুড়, বাদাম, খৈ, কর্ণ ফ্লেক্স, শিশু খাদ্য যেখানে আয়রন বা লৌহ যোগ করা আছে যেমন : সেরিল্যাক, কৌটার দুধমধু, দুধ, দই, ছানা, চাল, ময়দা, পাউরুটি

পরিশেষে বলতে চাই, যার ঘরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তান রয়েছে সেই বাবা-মা কেবল বোঝেন যে এই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তানদের কি কষ্ট। কারণ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সেই সন্তানের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বাবা মাকেও সমান তালে লড়ে যেতে হয় তাদের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য। যেহেতু এই রোগের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই, তাই প্রতিরোধই একমাত্র ব্যাবস্থা। তাই আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই থ্যালাসেমিয়ার মতো একটি জটিল রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারবো। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রি উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক নয় এটা সামান্য একটি রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে পারলেই এই থ্যালাসেমিয়াকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), শিশু নেফ্রোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here