নারী ডেস্ক: প্রাচীন এথেন্সের আইনে নারীদের চিকিৎসাবিদ্যাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এই আইন অমান্য করার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। নারী চিকিৎসক না থাকায় নারী রোগীদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো।
নারীদের এমন দুরবস্থা দেখে মনে মনে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন অ্যাগনডাইস। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ডাক্তার তিনি হয়েই ছাড়বেন। এজন্য এক ফন্দি আটলেন অ্যাগনডাইস। মাথার চুল কেটে ছেলেদের ছাট দিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন মিশরের উদ্দেশ্যে, যেখানে নারীদের বেলায় এমন কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। সেখানে গিয়ে বিদ্যার্জন করে ডাক্তার অ্যাগনডাইস ফিরে আসেন।
এথেন্সে না হয় ফিরে আসা হলো, কিন্তু সেখানে আইন তো আর পাল্টায়নি। ওদিকে নিজের স্ত্রীরোগ বিষয়ক বিদ্যাকেও তো আর অলস পড়ে থাকতে দেওয়া যায় না। তাই তিনি পুরুষের ছদ্মবেশেই চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু এরপরও যদি কোনো মহিলা রোগী এসে তার কাছে সমস্যা খুলে বলত বা তার হাতে অপারেশন করাতে রাজি না হতো, তাহলে তাদের কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতেন তিনি। এতে মানসিকভাবে বেশ প্রশান্তি পেত সেই মহিলা রোগী। অ্যাগনডাইসের হাতে চিকিৎসা নিত নির্দ্বিধায়। এভাবেই আস্তে আস্তে প্রসার বাড়তে থাকে অ্যাগনডাইসের, বিশেষত মহিলা রোগীদের মাঝে। ওদিকে সমকালীন অন্যান্য ডাক্তারদের তো তখন মাথায় হাত। “হায়, হায়! এ কী অবস্থা! কোথা থেকে এক নতুন চিকিৎসক এসে কি না আমাদের সব মহিলা রোগীদের নিয়ে নিচ্ছে!” বলা বাহুল্য, এই চিকিৎসকদের সকলেই ছিলেন পুরুষ। তারা অ্যাগনডাইসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলেন। অ্যাগনডাইসের অপরাধ, তিনি নারী রোগীদের প্রলুব্ধ করেন তার কাছে চিকিৎসা নিতে।
নিজের পেশার মানুষদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ শুনে অ্যাগনডাইস যেন আকাশ থেকে পড়লেন। যথাসময়ে বিচারকের দরবারে হাজির হলেন তিনি। সেখানে যখন বুঝতে পারলেন শাস্তি এড়ানোর আর কোনো উপায় নেই, যেখানে তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে মহিলা রোগীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হবার, তখন তিনি নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন।
মিথ্যা অপবাদ থেকে বেঁচে গেলেও আইন ভঙ্গ করার অপরাধে তার সামনে মৃত্যুদণ্ড হাজির হলো। এবার আর অ্যাগনডাইসকে কোনো কথা বলতে হয়নি। এতদিন তার কাছ থেকে কম মহিলা চিকিৎসা নেয়নি। তারাই এবার ছুটে এলো বিচারকার্য চলাকালে। বিচারককে তারা জানালো অ্যাগনডাইসের পাকা হাত ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার কৃতিত্বের কথা। বিচারক সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, অ্যাগনডাইসকে ছেড়ে দেওয়া হবে। শুধু তা-ই না, এরপর থেকে এথেন্সে নারীদের উপর ডাক্তার হওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেই আইনও চিরতরে বিলুপ্ত করা হয়। আর এভাবেই নারীদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন অ্যাগনডাইস।