অর্থনৈতিক ডেস্ক: আসছে বাজেটে নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কৌশলে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় সারা বিশ্বের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় বিশ্বজুড়েই বেড়েছে পণ্যমূল্য। বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। ফলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চ্যালেঞ্জ থাকছে নতুন বাজেটে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক কিছু পদক্ষেপ থাকছে নতুন বাজেটে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিও বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবারে ব্যয় সাশ্রয়ী উদ্যোগে বেশি জোর দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনা, নতুন ভবন নির্মাণসহ বিলাসী ও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়গুলো কমিয়ে অর্থ সাশ্রয় করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটে কর হার না বাড়িয়ে কর জাল বা আওতা বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাজেটে রাজস্ব কাঠামোর খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সূত্র জানায়, প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন, পেশাজীবী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া বাজেট প্রস্তাব এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পর্যালোচনা করেছেন। এর ভিত্তিতে একটি খসড়া কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। করোনা পরবর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসায় বিদ্যমান কর কাঠামোতেই এ লক্ষ্য অর্জনযোগ্য। কেননা বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। এতে রাজস্ব আয় বাড়ার সুযোগ রয়েছে। তাই বাজেটে কর হার বাড়ানোর চিন্তা থেকে সরে আসা হয়েছে। আগের বছর থেকে মাত্র ১১ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আদলেই হবে আগামী বাজেট। নতুন পদক্ষেপের মধ্যে স্থানীয় শিল্পকে কীভাবে কর ছাড় দিয়ে চাঙ্গা করা যায় সেই প্রয়াস থাকবে। এ জন্য কোন কোন খাতে ছাড় দেওয়া যায় তার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। এর পরেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। গত দুই অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। করোনাকালীন বেসরকারি খাতকে সহায়তা করতে এ কর ছাড় দেওয়া হয়। এবারও কিছু ছাড় আসতে পারে। তবে ঢালাওভাবে করপোরেট কর ছাড় থাকছে না। এটিকে আরো নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। একই সঙ্গে গত ১০ বছরের অধিককাল ধরে যারা ট্যাক্স-ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছে তাদের প্রদেয় সুবিধা কর্তন করার চিন্তা করা হচ্ছে। নতুন খাত চিহ্নিত করে কর্মসংস্থান মুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এরই মধ্যে তার বক্তব্যের খসড়া তৈরিতে কাজ শুরু করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, বাজেট প্রস্তাবে আগামী অর্থবছরের জন্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বাড়তি ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান করা এবং বেসরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে কর্মসংস্থান তৈরি করা। এছাড়া আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি হ্রাস ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে অর্থ সাশ্রয়ে ইতিমধ্যে সরকারি নানা সিদ্ধান্ত এসেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনা, নতুন ভবন নির্মাণসহ বিলাসী ও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়গুলো কমিয়ে অর্থ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমদানি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বিলাসদ্রব্য ও দেশে উৎপাদনযোগ্য পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। উন্নয়ন বাজেটের আওতায় কর্ম সৃজনকারী ও উৎপাদনমুখী প্রকল্পগুলোয় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।