বিজ্ঞান ডেস্ক: পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত একের পর এক ঘটনা ঘটে চলছে। এর মধ্যে কিছু সামান্য ও কিছু কিছু হচ্ছে অদ্ভুত, অলৌকিক ও অভাবনীয়। বিজ্ঞান দ্বারা অনেক রহস্যেরই সমাধান হয়েছে। তবে বিজ্ঞানের আড়ালেও রয়েছে অমীমাংসিত অনেক রহস্য, যা আজ অবধিও অজানা। আসুন জেনে নেই এমনই কিছু অমিমাংসিত বিষয়কে। রহস্য ছয়- এত লিথিয়াম গেলো কোথায়?
ব্রহ্মাণ্ডের শুরুর দিকে, তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। তখন হাইড্রোজেন, হিলিয়াম আর লিথিয়ামের আইসোটোপ বেশ ব্যাপক হারে সংশ্লেষিত (synthesized) হয়েছে। হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম এখনো ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। বলতে গেলে, ব্রহ্মাণ্ডের পুরো ভরটুকু এগুলো দিয়েই তৈরি। কিন্তু লিথিয়াম-৭ আইসোটোপ যতটুকু দেখা যাওয়ার কথা, তার মাত্র ৩৩% আমরা দেখতে পাই।
কেন এমনটা ঘটলো, সেটার পেছনে বেশ কিছু ধরনের ব্যাখ্যা শোনা যায়। একটা হাইপোথিসিস হচ্ছে, অ্যাক্সিয়ন নামে একটা হাইপোথেটিক্যাল বোসন কণার উপস্থিতি। অন্যরা মনে করেন, লিথিয়াম আটকে গেছে নক্ষত্রগুলোর একদম গভীরে, কেন্দ্রের কাছাকাছি। আর এটা তো আমাদের বর্তমান টেলিস্কোপ বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে সনাক্ত করা যাবে না। যাই হোক, একেবারে শক্তপোক্ত কোনো ব্যাখ্যাই এই দৌড়ে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে নেই।
রহস্য সাত- প্রাণের শুরু কীভাবে?
পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কীভাবে হলো? কোত্থেকে এলো? যারা মনে করেন, আদিম/মৌলিক স্যুপ মডেলকে কারণ হিসেবে মনে করেন, তাদের ধারণা- আদিম পৃথিবী এতোটা পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ছিল যে, সেখান থেকে জটিল থেকে জটিলতর অণু তৈরি হয়েছে, যা অবশেষে প্রাণের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। এটা গভীর সমুদ্রের তলদেশে, আগ্নেয়গিরির জালামুখে ঘটে থাকতে পারে, কাদাতেও হতে পারে, বরফের নিচেও হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন মডেলে, প্রাণের উৎপত্তির ক্ষেত্রে, বজ্রপাত বা আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ডকে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
এখন পৃথিবীতে প্রাণের সর্বময় ভিত্তি হচ্ছে ডিএনএ (DNA). বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রথমদিকের প্রাণের ক্ষেত্রে আরএনএ (RNA)-ই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি, অন্য কিছু বিজ্ঞানী DNA, RNA ছাড়া অন্যান্য নিউক্লিক অ্যাসিডের উপস্থিতির কথাও প্রস্তাব করেছেন। প্রাণ কি মাত্র একবারই তৈরি হয়েছে? নাকি তৈরি হয়ে, বিলুপ্ত হয়ে, আবার তৈরি হয়েছে? কেউ কেউ panspermia তে বিশ্বাস করেন, যে মত অনুসারে পৃথিবীতে প্রাণ নিয়ে এসেছে কোনো ধূমকেতু বা মহাজাগতিক প্রস্তরখণ্ড। এমনটা যদি ঘটে থাকে, তাহলে প্রশ্ন রয়েই যায়, ঐ প্রাণ কীভাবে তৈরি হলো?
রহস্য আট- প্লেট টেকটোনিকস কীভাবে কাজ করে?
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও, কনটিনেন্টাল প্লেটের নড়াচড়া, মহাদেশকে নতুন আকৃতি দেওয়া, ভূমিকম্প ঘটানো, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এমনকি পর্বতের উত্থান- এই থিওরিগুলো আসলে খুব সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়েছে। যদিও ১৫০০ সালের দিকেই প্রস্তাব এসেছিলো যে, মহাদেশগুলো একসময় একটাই ভূ-খণ্ড ছিল (মানচিত্র দেখলে যে কেউই বুঝতে পারার কথা), তবু ১৯৬০ সালের আগে পর্যন্ত এই ধারণাটা পালে হাওয়া পায়নি। ঐ সময়টাতেই সাগরের মেঝের বিস্তৃতির সপক্ষে শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, আর তখনই সাড়ে চারশো বছর পুরনো থিওরি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাগরের মেঝের বিস্তৃতির ধারণাটা হচ্ছে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে শিলাগুলো ম্যান্টল স্তরে পৌঁছে যায়, ওখানেই রিসাইকেল হয় এবং আবার ভূ-পৃষ্ঠে উঠে আসে ম্যাগমা হয়ে।
অবশ্য, বিজ্ঞানীরা জানেন না, কেন প্লেটগুলো স্থির নেই, অথবা ঠিক কীভাবে প্লেটগুলোর সীমানা নির্ধারিত হলো। আছে থিওরি বেশ কয়েকটাই, কিন্তু কোনোটাই সবগুলো ব্যাপারকে একসাথে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
রহস্য নয়- প্রাণীরা কীভাবে মাইগ্রেট করে?
অনেক প্রাণী আর কীটপতঙ্গ এক স্থান থেকে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে অন্য স্থানে বাসস্থান স্থাপন করে- প্রধানত, ঋতু ও তাপমাত্রার পরিবর্তন এড়ানোর জন্য, পানি বা খাদ্যের ঘাটতির জন্য, অথবা সংগীর খোঁজে। কিছু কিছু মাইগ্রেশন তো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের হয়ে থাকে। তো, কীভাবে এরা বছরের পর বছর, বারবার যাওয়া-আসার সেই পথের সন্ধান পায়?
একেক প্রাণী একেক ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করে, যাতায়াতের দিক নির্ণয়ের (ন্যাভিগেশনের) জন্য। কেউ কেউ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করতে পারে, নিজেদের মস্তিষ্কের কম্পাস ব্যবহার করে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, কীভাবে এই বৈশিষ্ট্য বিবর্তিত হলো; অথবা কীভাবে প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই প্রাণীগুলো মৌসুমের পর মৌসুম ধরে ঠিকঠাক ধরে ফেলছে যে আসলেই কোথায় যেতে হবে।
ডার্ক ম্যাটার কি দিয়ে তৈরী?
মহাবিশ্বের সমগ্র ভরের প্রায় ৮০ ভাগই ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি। ডার্ক ম্যাটার জিনিসটা বড় অদ্ভুত, এরা তো কোনো আলো প্রতিফলিত করে না। যদিও ৬০ বছর আগে এদের অস্তিত্বের তত্ত্ব হাজির করা হয়েছিল, তবু এখন পর্যন্ত এদের অস্তিত্বের কোনো যথাযথ প্রমাণ নেই।
অনেক বিজ্ঞানী ধারণা পোষণ করেন যে, ডার্ক ম্যাটার আসলে দুর্বলভাবে মিথক্রিয়ারত দানবীয় বস্তু, যাকে ইংরেজিতে বলে WIMP (Weakly Interacting Massive Particle). জিনিসটা প্রোটনের চেয়ে ১০০ গুণ দানবীয় হতে পারে। কিন্তু, baryonic matter এর সাথে এরা স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। আর তাই, সনাক্ত করার জন্য আমরা যে যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করি, সেগুলোতে এদেরকে ধরা যায় না। ডার্ক ম্যাটারের উপাদান হবার দৌড়ে এগিয়ে আছে axions, neutralinos, and photinos.