নারী ও শিশু ডেস্ক: রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইয়াতিম অবস্থায় দুনিয়ায় এসেছিলেন। প্রায় ৫ বছর বয়সে মাকেও হারান। ফলে তাঁকে লালন-পালনে আরও বেশি মনোযোগী হন হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর একত্ববাদী ধর্মে বিশ্বাসী দাদা আবদুল মুত্তালিব (আ.)। কিন্তু দাদাও বিদায় নেন কিছুকাল পর। বিদায়ের আগে প্রিয়তম নাতীর জন্য নিজেই সন্তানদের মধ্য হতে ঠিক করেন নতুন অভিভাবক হযরত আবু তালেব (রা.)-কে। তিনিও ছিলেন ইব্রাহিমের একত্ববাদী ধর্মে বিশ্বাসী। অর্থাৎ সে যুগে ইসলাম ধর্ম না থাকলেও মক্কার কুরাইশ বংশে ও বিশেষ করে হাশিমি গোত্রের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বাবা ইব্রাহিমের একত্ববাদী ধর্মে বিশ্বাসী। এই একত্ববাদীদেরকে বলা হত দ্বীনে হানিফ।
এমনই এক হানিফ পরিবারের সতী-সাধ্বী খোদাভীরু মেয়ে ছিলেন হযরত খাদিজা (রা.)। হযরত খাদিজা ব্যবসা-সূত্রে প্রবাদতুল্য বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁকে বলা হতো আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী রমণী। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি খাদিজার বাণিজ্য-কাফেলার সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন মহানবি (সা.) নবুয়ত লাভের আগে। এ সময়ে তাঁর অনন্য সততা, আমানতদারী ও ব্যবসায়িক দক্ষতা আর সাফল্য দেখে মুগ্ধ হন মা খাদিজা। ফলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান যুবক মুহাম্মদের অবিভাবক হযরত আবু তালেবের কাছে।
হযরত আবু তালেব (রা.) তাঁর প্রাণপ্রিয় ভাতিজার বিয়ের সময় বলেছিলেন: “সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে করেছেন ইব্রাহিমের বংশধর, ইসমাইলের বংশ হিসেবে, যিনি (আল্লাহ্) আমাদের করেছেন তার ঘরের (কাবা শরিফ) মুতাওয়াল্লি বা দেখাশোনাকারী অভিভাবক এবং পবিত্র চত্বর বা আঙ্গিনাগুলোর খাদেম, যিনি আমাদের জন্য তৈরি করেছেন একটি ঘর যা চাওয়া হয় হজের জন্য ও তা হলো নিরাপত্তার এক পবিত্র ঘর এবং তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন জনগণের ওপর কর্তৃত্ব বা নেতৃত্ব। আমার এই ভাতিজা মুহাম্মাদ একজন অতুলনীয় ব্যক্তি। সে খুয়াইলিদের কন্যা খাদিজার পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছে।” (সূত্র: ঐতিহাসিক ইবনে হিশামের লেখা বই আসসিরাত আন নাবাবিয়া)
আবু তালেব বিশ্বজগতের স্রষ্টা এক আল্লাহর প্রশংসা করলেন ভাতিজা তথা আল্লাহর শেষ নবির বিয়ের অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করার ভাষণে! হযরত ইব্রাহিমের বংশধর হিসেবে তিনি গৌরব অনুভব করলেন! ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাইলের বংশধর হিসেবে ও সেই সূত্রে কাবাঘরের অভিভাবক হিসেবে তিনি ও তার গোত্র যে আরবের অন্য গোত্রগুলোর ওপর কর্তৃত্ব বা নেতৃত্বের অধিকারী সেটাও উল্লেখ করলেন। মহানবির বয়স তখনও ২৫ বছর মাত্র এবং তিনি তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নবুয়তের দায়িত্ব পাননি। হযরত আবু তালেব যে মূর্তিপূজারীদের বিপরীতে ইব্রাহিমের ধর্মে বিশ্বাসী একত্ববাদী হানিফ বা আদি-মুসলিম ছিলেন তা এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আবু তালেব তো লাত, মানাত, হোবল এবং ওজ্জার মতো পৌত্তলিক ও মুশরিকদের দেবতাগুলোর নামও উচ্চারণ করতে পারতেন! মুর্তি পুঁজায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না বলেই তিনি মহান প্রতিপালকের স্তুতি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
খুয়াইলিদ ইবনে আসাদ ও তার স্ত্রী ফাতিমা বিনতে জা’দার কন্যা খাদিজাও অনন্য-সুন্দর চরিত্রের জন্য আত ত্বাহিরা বা পবিত্র হিসেবে খ্যাত ছিলেন। সম্পর্কের দিক থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন খাদিজার দূরবর্তী চাচাত ভাই। দয়াল রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ২৫ বছর ঘর করেন মা খাদিজা। বিয়ের ১৫ বছর পর মুহাম্মাদ (সা) নবুয়তি তথা ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ইসলামের দাওয়াত পেয়েই সাথে সাথেই কবুল করেন তিনি। আর তাই হযরত খাদিজাই ছিলেন মোহাম্মদী ইসলামের সর্বপ্রথম মুসলিম রমণী।
যে বছর হযরত খাদিজা (রা.) ইন্তিকাল করেন সেই বছর ইন্তিকাল করেন হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রিয় চাচা ও অভিভাবক হযরত আবু তালেব (রা.)। তাই এ বছরটিকে ইসলামের ইতিহাসে ‘আমুল হোজন’ বা ‘দুঃখের বছর’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
হযরত খাদিজাকে দাফন করার পর সাত বছরের শিশু কন্যা হযরত ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন সারওয়ারে কায়েনাত হযরত রাসুল (সা.)। শিশু ফাতিমা যখন পিতাকে প্রশ্ন করেন: বাবা! আমার মা কোথায় গেছেন, এ সময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন রহমাতুল্লিল আলামিন। এসময় ফতিমা (রা.)-কে সান্ত্বনা দেন স্বয়ং রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ্ তায়ালা দয়াল রাসুলের মাধ্যমে হযরত ফাতিমা (রা.)-এর কাছে সালাম ও দরুদ পাঠান এবং বলেন, ‘‘তোমার মা রয়েছেন বুটিদার রেশমি কাপড়ের এমন একটি ঘরে যার প্রান্ত বা দেয়ালগুলো সোনার নির্মিত ও খুঁটিগুলো চুনি বা রুবি পাথরের তৈরি। ঘরটি রয়েছে আসিয়া বিনতে মুজাহিম (ফেরাউনের স্ত্রী) এবং মারিয়াম বিনতে ইমরানের (হযরত ঈসার মা) ঘরের মাঝখানে।’’
শিশু ফাতিমা সালাম ও দরুদের জবাবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অনন্ত শান্তি এবং সকল শান্তি তাঁর থেকে।’’ ফাতিমা পরবর্তীকালে বাবার অনন্য সেবা যত্নের জন্য উপাধি পান উম্মে আবিহা বা বাবার মাতা।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট….আমিন।
শিক্ষনীয় পোষ্ট
অনেক মূল্যবান বাণী মোবারক
সুবাহান আল্লাহ
আলহামদুলিল্লা,
সঠিক ত্বথ্য জানতে পারলাম।
আলহামদুলিল্লা।
মহান মালিকের কাছে শুকরিয়া অনলাইনে মোহাম্মাদী ইসলামের সঠিক পাওয়ার জন্।
আলহামদুলিল্লা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিসয় জানতে পারলাম