মো. ছায়েদুর রহমান খান (ইকবাল)
প্রেম-ভালোবাসা এক অবিনশ্বর শক্তি। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে প্রেমের রূপ যাই-ই হোক না কেন-এই প্রেমের টানেই মহান রাব্বুল আলামিন বিচিত্র সৃষ্টির দ্বারা এ জগতকে করেছেন সুন্দর থেকে সুন্দরতম। অনাদিকালে যে প্রেমের উৎস, অনন্তকালে সেই প্রেম থাকবে অম্লান। আপন প্রেমের মোহে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন স্বরূপে সৃষ্টি করেছেন আদম সন্তান। ভালোবাসার গভীর টানেই গোলাম জাতকে দিয়েছেন স্বীয় প্রতিনিধির মর্যাদা। আর এরই বদৌলতে নগণ্য মানবজাতি হয়েছে অতি উত্তম, সৃষ্টির সেরা জীব।
মহান রাব্বুল আলামিনের গভীর ভালোবাসার পরম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে- ‘নুরে মোহাম্মদী ’ থেকে ‘মানুষ মোহাম্মদ’ -এর সৃষ্টি। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা এভাবেই মানবজাতির কাছে প্রকাশ করেছেন- ‘‘যে আমার (আল্লাহর) হাবিবকে ভালোবাসে, প্রকৃতপক্ষে সে যেন আমাকেই ভালোবাসে।’’ অর্থাৎ- মহান প্রভুর সাথে ভালোবাসা স্থাপনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- রাহমাতুল্লিল আলামিন-এর ভালোবাসা অর্জন। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের বাণী থেকেই পরিস্কার বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ ও রাসুলের ভালোবাসা কতো নিবিড় ও গভীর।
মহান প্রভু তাঁর পরম প্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন সময় রাহমাতুল্লিল আলামিনকে কঠোর থেকে কঠোরতম পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। হযরত রাসুল (সা.) মহান মালিকের প্রেমে বিভোর ছিলেন আজীবন। পার্থিব সুখ, আরাম-আয়েশকে তুচ্ছ করে প্রভুর প্রেমের টানে, ধ্যানে মগ্ন হয়ে হেরাগুহায় কাটিয়েছেন জাহেরি জীবনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সময়।
রাহমাতুল্লিল আলামিন সুমধুর ভালোবাসার বারিপাতে শীতল করেছেন বালুকাময় উত্তপ্ত মরুর বুক। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে আরবের অসংখ্য মানুষ নিজেকে কলুষমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। আপন প্রাণের চেয়ে আল্লাহর হাবিবকে বেশি ভালোবেসে হযরত রাসুল (সা.)-এর স্থায়ী সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হয়েছেন অনেকেই। আর তাঁরা প্রাণ উজার করে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে একটু একটু করে অর্জন করেছেন তাঁর অমীয় প্রেম সুধা। তাঁরা অর্জন করেছেন সত্যিকারের আশেকে রাসুলের মর্যাদা। হযরত রাসুল (সা.) তাঁর প্রেমিক সাহাবাগণকে শুধু চির শান্তিময় ছায়াতলে আশ্রয়ই দেননি- অভিষিক্ত করেছেন ‘উজ্জল নক্ষত্র’ উপাধিতে। সাহাবায়ে কেরামের এই পরম পাওয়া যে রাহমাতুল্লিল আলামিনের প্রেমার্জনের ফসল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অশান্ত আরব ভূমিকে চির শান্তির আবাস বানিয়ে হযরত রাসুল (সা.) এক সময় নিজেকে বিলিন করে দেন পরম সত্তার সাথে।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জগতের বুক থেকে রাসুল প্রেমিকের সংখ্যাও কমতে থাকে। কিন্তু অবিনশ^র শক্তি‘ প্রেম’ চির উজ্জ্বল আপন গুণে। মহান রাব্বুল আলামিন কারবালার ময়দানে ঘটালেন চির স্মরণীয় বিরহ বিজড়িত প্রেম লীলা। অসংখ্য রাসুল প্রেমিককে স্বহস্তে তুলে মিশিয়ে নিলেন আপন সত্তার সাথে।
নবুয়তের যুগের অবসান ঘটিয়ে বেলায়েতের যুগের নতুন অধ্যায় সূচনা করলেন মহান প্রভু। সৃষ্টিজগত পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করলেন আওলিয়ায়ে কেরামের হাতে। অলী-আল্লাহ্গণ হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমাদর্শ আপন সিনায় (হৃদয়) ধারণ করে মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ মানব সমাজে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে চলেন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
যখনই যে সমাজের মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত (সা.)-এর কথা ভুলে গিয়ে অসৎ চরিত্র ধারণ করতে উদ্যত হয়েছে- আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তখনই সেই সমাজে শান্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করেন একজন মহান অলী-আল্লাহ্। এভাবে মুক্তির দিশারী হিসেবে জগতের বুকে মহান আল্লাহ্ অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ প্রেরণ করেন। যাঁদের মধে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.), গরিবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.), হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.), হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নাম চিরভাস্বর। অলী-আল্লাহ্গণ সমকালীন যুগে ভ্রান্তপথগামী মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন, সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তি। সমাজের মানুষ অলী-আল্লাহ্গণের সুমধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁদের কাছে বায়াত গ্রহণ করেন। আল্লাহর বন্ধুগণকে মোর্শেদ হিসেবে গ্রহণ করেন। স্বীয় মোর্শেদের গোলামী করে অনেকেই অর্জন করেছেন আল্লাহর অলীর প্রেম-ভালোবাসা। যে প্রেমের সুতোয় গাঁথা সমস্ত নবি-রাসুল ও আওলিয়ায়ে কেরাম। মোর্শেদের প্রেমের স্রোতে ভেসে কতো মুরিদই পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন হযরত রাসুল (সা.)-এর রূহানি কদম মোবারক। অর্জন করেছেন তাঁর চির মধুর ভালোবাসা, আশেকে রাসুল হওয়ার গৌরব।
পরম দয়ালু মহান আল্লাহ্ রহস্যময় প্রেমের এক ব্যতিক্রমী বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন এ বাংলায়। বাঙালি মায়ের কোলে তুলে দিলেন পূর্ণিমার চাঁদ। নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক বানিয়ে তাঁর অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন বাঙালি জাতির পরম গর্বের ধন, সৃষ্টির প্রাণের স্পন্দন, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম পূর্ণিমার চাঁদে বাবে দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে।
আম্বিয়ায়ে কেরামের বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বর্তমান সমাজের মানুষের কাছে এক অতিনন্দিত মহাপুরুষ। তাঁর প্রেমের রওশন আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। তাঁর প্রেমের আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, অসংখ্য মানুষের কুলুষিত আত্মা। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সমাজের মানুষকে বাস্তব ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। পরম লক্ষ্যে পৌঁছাতে সঠিক মাধ্যমকে অনুসরণ যে অত্যাবশ্যক, তিনি তা মানুষকে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
আপন মোর্শেদের প্রেম সাগরে ডুবে কিভাবে তাঁর ভালোবাসা অর্জন করতে হয়, তিনি তা অত্যন্ত সুন্দর ও সহজভাবে মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সমাজের মানুষকে রাসুল প্রেমিক হওয়ার জন্য শুধু উদাহরণই দেননি; মোর্শেদের প্রেম অর্জন করে কিভাবে রাহমাতুল্লিল আলামিনের ভালোবাসা অর্জন করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর প্রেমসুধা পেয়ে হয়েছেন পরিতৃপ্ত। আর সেই মোর্শেদের প্রেমই সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান-এর হৃদয়কে করেছেন হযরত রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা আর আদর্শে পরিপূর্ণ। তিনি আজ শুধু রাহমাতুল্লিল আলামিনের অন্যতম প্রেমিকই নন, তিনি বিশ্বের বুকে রাসুল প্রেমিক তৈরীর এক মহান কারিগর।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নুরানিময় চেহারা মোবারক দর্শনে, পরশময় কদম মোবরকের ছোঁয়া পেতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের ভীড় হচ্ছে ঢাকাস্থ আরামবাগের বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে। সেখানে আগত সবারই লক্ষ্য হচ্ছে- মোর্শেদের অসিলায় হযতর রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জন করে আশেকে রাসুল হওয়া। কিন্তু প্রেমের পথ কি এতই মসৃণ? প্রেমের অনল কি কুসুমের মতো উষ্ণ? কখনোইনা। বরং প্রেমের পথ সর্বদাই বন্ধুর। প্রেমানল সর্বদাই তীব্র থেকে তীব্রতর। যে ব্যক্তি দীপ্তিহীন প্রেমের অনলে নিজেকে পলে পলে দগ্ধ করতে সক্ষম, কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই সত্যিকার প্রেমিকের দাবীদার। আমাদের মহান মোর্শেদ পরম দয়ালু। তিনি ভালোবেসে আমাদেরকে ‘আশেকে রাসুল’ বলে ডাকেন। মহান মোর্শেদ আমাদেরকে এক দুর্লভ উপাধি প্রদান করেছেন বটে, কিন্তু ভাববার বিষয়! আমাদের হৃদয়ে রাহমাতুল্লিল আলামিনের ভালোবাসা কতটুকু সৃষ্টি হয়েছ? যে মুরিদ আপন মোর্শেদকেই ভালোবাসতে শেখেনি, সেই অধম কীভাবে নিজেকে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিক বলে দাবী করে?
হযরত রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে, আপন হৃদয়ে স্বীয় মোর্শেদের প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করা। কারণ মোর্শেদ হচ্ছেন রাহমাতুল্লিল আলামিনের বাস্তব প্রতিনিধি। মোর্শেদের অসিলা ছাড়া রাসুলের ভালোবাসা পাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। আর মোর্শেদের ভালোবাসা অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে-একাগ্রচিত্তে তাঁর গোলামী করে যাওয়া। মোর্শেদের গোলামীর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুরিদের হৃদয়ে মোর্শেদের ভালোবাসার উদ্ভাবনা শক্তি। একমাত্র গোলামের বেশেই মোর্শেদের হুকুম তালিম করা সম্ভব। মোর্শেদের আদেশ, নিষেধ, নির্দেশ মেনে চলা মুরিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ। মোর্শেদের নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করে সর্বাগ্রে নিজেকে অন্তরের কুলুষতা দূর করতে হবে। কারণ, অপরিশুদ্ধ হৃদয় কখনো মোর্শেদের ভালোবাসতে শুরু করে, মোর্শেদ তখন দয়া করে সেই মুরিদের জন্য আপন হৃদয়ের ভালোবাসার দ্বার খুলে দেন। তখন মোর্শেদের ভালোবাসার পরশে মুরিদের হৃদয় হয়ে উঠে তৃপ্ত।
মোর্শেদের প্রেমের ছোঁয়ায় উদ্বেলিত হয়ে তাঁরই প্রেমের অনল প্রবাহে নিজেকে যে যত বেশি পোড়াতে সক্ষম, তার হৃদয় হয়ে উঠে ততই স্বচ্ছ থেকে অতি স্বচ্ছ। আর মোর্শেদের অসিলায় তখন সেই অতি স্বচ্ছ হৃদয়ে পৌঁছাতে শুরু করে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমের রওশন। ধীরে ধীরে শুরু হয় রাহমাতুল্লিল আলামিনের সাথে প্রেমের গভীর বন্ধন। মোর্শেদের প্রেম সুধায় তৃপ্ত হৃদয় তখন হয়ে উঠে পরম তৃপ্ত। সুতরাং রাহমাতুল্লিল আলামিনকে ভালোবাসতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই মোর্শেদের প্রেম হাসিল করতে হবে। অন্যথায় নিজেকে কেবল আশেকে রাসুলই বলা যাবে কিন্তু রাসুলের প্রেমিক হওয়া যাবে না।
মহান রাব্বুল আলামিন যাঁর প্রতিচ্ছবি রূপে নিজেকে পূর্ণিমার চাঁদে প্রকাশ করেছেন, সেই মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ভালোবাসা অর্জনে আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
মহান আল্লাহ তায়ালা দরবারে ফরিয়াদ জানাই,
আমরা যেনো এই যগত শ্রেষ্ঠ, মহা মানাবের নিদের্শিত পথে চলতে পারি। আমিন
অনেক সুন্দর সূফী তথ্য জানতে পারলাম এই নিউজ পোর্টাল এর মাধ্যমে।
সবকিছুর চেয়ে মহান মোর্শেদকে ভালোবাসার তৌফিক ভিক্ষা চাই দয়াময়।
ওগো দয়াল দরদী বাবাজান আমরাতো প্রেমেরই কাঙ্গাল ।
এই পোস্টর মাধ্যমেঅনেককিছুজানতেপারলাম
খুবইগুরুত্বপূর্ণ বানি মোবারক