মৌলভীবাজারের জুড়ীতে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়?

0
598

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দশম শতকের প্রথম ভাগে শ্রীহট্টের মৌলভীবাজারের জুড়ীতে (বর্তমানে উপজেলা) ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে বলে অনেকে মনে করেন। সেখানে চতুর্বেদ, চান্দ্র ব্যাকরণ, হিন্দু শাস্ত্রবিদ্যা, হেতুবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতিষবিদ্যা, শল্যবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, শব্দবিদ্যাসহ নানা বিষয় পড়ানো হতো। সেই ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে আগামী সপ্তাহে জুড়ীতে আসছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে এটি হবে পৃথিবী বিখ্যাত অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজ থেকেও প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।

জুড়ীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তি রয়েছে মর্মে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লেখালেখি করছেন। এই বিষয়ে সরেজমিন জরিপ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রয়োজন উল্লেখ করে সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালককে ১৫ জুলাই চিঠি দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুজ্জামান।

জনশ্রুতি রয়েছে, জুড়ীতে এক বৌদ্ধ রাজার বসবাস ছিল। সেই চন্দ্র বংশীয় বৌদ্ধ রাজা শ্রীচন্দ্র আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জুড়ীর সাগরনাল গ্রামে ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রীচন্দ্র এজন্য ৪০০ পাটক জমি (এক পাটক=৫০ একর বা ১৫০ বিঘা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ করেছিলেন। ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদারের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থ মতে শ্রীচন্দ্রের শাসনামল ছিল ৯০৫-৯৫৫ সাল পর্যন্ত। তাঁর শাসন এলাকার মধ্যে ছিল মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুরের পদ্মা তীরবর্তী এলাকা, শ্রীহট্ট অঞ্চল ও কুমিল্লা। যার রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৬১ সালে একটি তাম্রশাসন (তামার পাতে লিখিত দলিল, রাজকীয় নির্দেশ খোদাই করে লেখা থাকত) আবিষ্কৃত হয়। যেটির তথ্য মতে, আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন রাজা শ্রীচন্দ্র।

প্রত্নতত্ত্ববিদ কমলাকান্ত গুপ্ত চৌধুরী তাঁর ‘ঈড়ঢ়ঢ়বৎ ঢ়ষধঃবং ড়ভ ঝুষযবঃ’ গ্রন্থে তাম্রশাসন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে এতদঞ্চলে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। লেখক ও ব্যাংকার অমিতাভ পাল চৌধুরী এক প্রবন্ধে বিভিন্ন লেখককে উদ্ধৃত করে বলেছেন, শ্রীচন্দ্রের সাম্রাজ্য অনুসারে এতদঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবিষ্কৃত তাম্রশাসন অনুযায়ী খ্রিস্টীয় ১০ শতকের প্রথম ভাগে উত্তরে কুশিয়ারা নদী, দক্ষিণ ও পশ্চিমে মনু নদী এবং পূর্বে ইন্দেশরের পাহাড়ি অঞ্চল বা পাথরিয়া অঞ্চল—এই সীমানার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল। জুড়ীর সাগরনাল ইউনিয়নের দীঘিরপার এলাকায় এটি ছিল বলে জোর ইঙ্গিত মেলে। কারণ এখানে কবর খুঁড়তে গেলে প্রাচীনকালে তৈরি বড় বড় ইটের টুকরা ও মাটির বাসন পাওয়া যায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও কোনো শাসকের রোষানলে পড়ে না অন্য কোনোভাবে ধ্বংস হয়েছিল তা জানা যায়নি। ভারতের বিহারের পাটনা জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here