ফেতনা থেকে দূরে থাকতে এবং পরকালের প্রস্তুতি বিষয়ে ড. কুদরত এ খোদার নির্দেশনা


বিশেষ সংবাদদাতা: সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের চেহলাম উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিশেষ আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে মেজো সাহেবজাদা, দেওয়ানবাগ শরীফের সমন্বয়ক, পরিচালক ও আশেকে রাসুলদের সমস্যার ফয়সালাকারী ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমরা সকলেই অবগত আছি গত ৪০ দিনে আশেকে রাসুলদের ওপরে এক বিশাল ঝড় বয়ে যায়। আমরা অবগত আছি, মোর্শেদ কেবলাজানের ওফাতে যখন আশেকে রাসুলেরা মর্মাহত, তখন মুনাফিকের দলেরা আশেকে রাসুলদেরকে একে একে আঘাত করতে থাকে। ফেইসবুকের মাধ্যমে হোক, ইউটিউবে অথবা সামনাসামনি হোক বিভিন্নভাবে আল্লাহর মহান বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর বিরুদ্ধাচরণ করে, মিথ্যাচার করে একে একে তারা মোর্শেদকে নিয়ে বিভিন্ন কুৎসা রটাতে থাকে। শুধু তাতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, যেহেতু মোর্শেদ কেবলাজান নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমার নাম বলে গিয়েছেন এবং ৩ আওলাদকে সহযোগিতার কথা বলেছেন তাঁর অছিয়তে। আমরা মোর্শেদ কেবলাজানের দেহ মোবারককে সামনে নিয়ে ৪ ভাইসহ সকল আশেকে রাসুল অঙ্গীকার করি যে, মোর্শেদের এই অছিয়ত আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। মুনাফিকের দল অছিয়তনামা নিয়েও আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা শুরু করে, যেন আশেকে রাসুলেরা এক নেতৃত্ব থেকে দূরে সরে যায়। আমি বলতে চাই, দেওয়ানবাগীর আশেকে রাসুলের ইমান মোমবাতির সলতের আগায় থাকে না। দেওয়ানবাগীর মুরিদ সন্তানের ইমান ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। মিথ্যা রটানো যায়, ফেতনা করা যায়। ফেতনাকারী তুমি হাজারো অপবাদ দাও, তুমি দেওয়ানবাগীর মুরিদ সন্তানের অন্তর থেকে দেওয়ানবাগীকে সরাতে পারবে না। তুমি যত অপবাদ দিয়ে আমার মোর্শেদকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করো, আমার মোর্শেদ কলঙ্কিত হবেন না। আমার অন্তরে মোর্শেদ থাকবেন আলোকিত। আর তুমিই হবে কলঙ্কিত। অপেক্ষা করো সময় আসছে, এই কলঙ্ক তোমার কাছেই ফেরত যাবে। দেওয়ানবাগীর মুরিদের ইমান নরম নয়। ফেইসবুকে এডিট করা দুইটি ভিডিও দেখিয়ে, ইউটিউবের দুইটি বক্তব্য শুনিয়ে দেওয়ানবাগীর কোটি কোটি আশেকে রাসুল মুরিদকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই আমি সকল আশেকে রাসুলদেরকে আজকের এই চেহলামের দিনে অনুরোধ করছি, নিজেদের ইমানকে বলিষ্ঠ করেন এবং দুর্গের মতো নিজেকে তৈরি করেন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে মেজো সাহেবজাদা হুজুর বক্তব্য প্রদান করেন।

ইমাম ড. কুদরত এ খোদা বলেন, নিজের অন্তরের মাঝে মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ সংবলিত মোহাম্মদী ইসলামকে চির জাগ্রত রাখুন। আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগী আপনার অন্তরে থাকেন।

ড. কুদরত এ খোদা বলেন, দুঃখের বিষয় এই ফেতনাতে আমাদের কিছু নামধারী আশেকে রাসুল জড়িত আছে। আমি বিশ্বাস করি দেওয়ানবাগীকে যারা ভালোবাসেন, তারা জীবনেও ফেতনায় জড়াতে পারেন না। যার অন্তরে বাবা দেওয়ানবাগী থাকেন, তিনি কখনো ফেতনা করবেন না। তিনি বরং ফেতনার সমাধান করবেন। এই মুনাফিকেরা আপনাদের ভিতরে আশেকে রাসুলের লেবাস ধারণ করে, আপনার মনের মধ্যে বিভিন্ন ফেতনামূলক প্রশ্ন তৈরি করে দেয়, যাতে আপনি ইমানহারা হয়ে যান। মনে রাখবেন, ইমান পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান। আপনি দুই বছর, পাঁচ বছর, দশ বছর, বিশ বছর থেকে আজ অবধি মোর্শেদের কদমে পড়ে আছেন। সুতরাং সর্বদা আজিজি রাখবেন-ওগো আল্লাহর বন্ধু বিশটা বছর তোমার কদমে দিলাম, আজ এই শেষ সময়ে বেইমান হয়ে কবরে যেতে চাই না। আমি জানি আজ এই মুনাফিকেরা বিভিন্ন অমূলক প্রশ্ন করে আশেকে রাসুলদের মধ্যে ফেতনা তৈরি করার চেষ্টা করছে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি আওলাদবর্গকে যারা আজকে অছিয়তের কথা পুনরাবৃত্তি করে আবার আশেকে রাসুলদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আমরা একত্রিত আছি।

ড. মেজো সাহেবজাদা হুজুর বলেন, এটা এমন এক যুদ্ধ, আগে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম বাইরের শত্রুর সাথে। এখন আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে ভিতরের শত্রুর সাথে। এই যুদ্ধে আমরা কেউ মারামারি করব না। এই যুদ্ধে আমরা কেউ পরনিন্দা, পরসমালোচনা করব না। এই যুদ্ধে আমরা নিজেকে পরিশুদ্ধ করব। নিজের অন্তরের কলুষতাকে দূর করব। নিজের ইমানকে শক্তিশালী করব। আমরা ডিফেনসিভ ওয়েতেই যুদ্ধকে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এখন আমাদের পরনিন্দা, পরসমালোচনা করার সময় নয়। আমরা সেটা শিক্ষা দেই না। আমাদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে যে, দেওয়ানবাগীর ৩ কোটি মুরিদ সন্তানকে ইমানের পথে পরিচালিত করা। আর সেই লক্ষ্যে আমি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই আপনারা একে একে আপনাদের কর্মসূচিগুলো জানতে পারবেন। এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর পথে এই ৩ কোটি আশেকে রাসুলদের উঠিয়ে দেওয়া। কারণ তাদের ইমানকে শক্তিশালী করতে হবে।

ড. কুদরত এ খোদা বলেন, মনে রাখতে হবে আমার জন্য যেমন ঐ অন্ধকার কবর অপেক্ষা করছে। আপনার জন্যও অপেক্ষা করছে ঐ অন্ধকার কবর। আজ আমরা মহান মোর্শেদের চেহলাম পালন করছি, কাল আমাদের চেহলাম হবে। আজ থেকে ৪০ দিন আগে আমরা মোর্শেদকে শায়িত করে দিয়ে এসেছি, কাল আমাদেরকেও কেউ না কেউ রেখে আসবে ঐ অন্ধকার কবরে। মরার আগে মৃত্যুবিদ্যা শিক্ষা করতে হবে। আর এই মৃত্যুবিদ্যা হলো আল্লাহর সন্তুটি অর্জন। হযরত রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন। নিজের মোর্শেদের সন্তুষ্টি অর্জন। আপনি যদি সাধনার মাধ্যমে নিজের মোর্শেদকে রাজি খুশি করতে পারেন, হযরত রাসুল (সা.)-কে রাজি খুশি করতে পারেন এবং আল্লাহকে রাজি খুশি করতে পারেন, তবে ভয় নাই কবরে, ভয় নাই হাশরে। তাই আমাদের জন্য এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ, এই যুদ্ধে নিজেকে ইমানদার বানানোর। নিজের চরিত্রকে সংশোধন করা। মনে রাখবেন আমরা কেউ ষড়রিপুর উর্ধ্বে নই। যে বলে আমার রিপু নেই, ঐটাই বড়ো রিপু, রিপুু কখনও ধ্বংস হয় না। রিপুকে পরিশুদ্ধ করতে হয়। রিপুকে খারাপ থেকে ভালোর দিকে আনা যায়, তবে এটা বড়ো কঠিন কাজ। সাধনা, একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা এবং ত্যাগ ছাড়া এ রিপু সংশোধন হবে না।

ড. মেজো হুজুর বলেন, আজকে চেহলামের দিন। প্রস্তুত হন নিজেকে তৈরি করার জন্য। প্রতিনিয়ত মোরাকাবা করেন, তওবা করেন, সংকল্প করেন- ওগো দয়াল মাওলা, দয়াল খোদা! আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর কদমে ছিলাম, আজো আছি, আগামীতেও থাকব। হয়ত জাহেরাতে মোর্শেদকে দেখব না, তবে বাতেনিতে আল্লাহর বন্ধুকে আমি দেখি। আল্লাহর বন্ধুর কদম ধরে ক্ষমা চাই। তুমি গোলামদের ক্ষমা করে দাও। তুমি গোলামদের অন্তরের কলুষতাকে দূর করে দাও, তুমি গোলামদের মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর পথে ধাবিত করে দাও। এই বিদ্যায় আমাদের নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। মনে রাখবেন, যারা রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন, যারা নিজেদের মধ্যে ফেতনা লাগানোর চেষ্টা করছেন, আপনাকেও মালিকের কাছে জবাব দিতে হবে। আপনার পরামর্শে যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত হয়, আল্লাহর কসম সেজন্য আপনাকে জবাব দিতে হবে। আপনি যদি ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে বা আমাদেরকে ভুল পথে নেন, আল্লাহর কসম আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব নিজের কর্মের জবাবের জন্য নিজে তৈরি হোন। পরের চিন্তা ত্যাগ করেন। আশা করি আপনাদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে।

ইমাম ড. কুদরত এ খোদা বলেন, আমরা অবগত আছি। আমি জানি আপনাদের মনের মধ্যে অনেক কষ্ট যে, আপনারা মোর্শেদ কেবলাজানের রওজা মোবারক জিয়ারতের সুযোগ পাচ্ছেন না। এটা নিয়েও ফেতনাকারীরা একের পর এক ফেতনা করছে। তারা বলছে, আমরা মোর্শেদকে রওজায় আটকিয়ে রেখেছি। আমার নামে হাজারও বদনাম। আমি আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর গোলাম। এই বদনামের পরেও আপনারা কি আমার সাথে কাজ করবেন? কারা করবেন হাত উঠান। আমি দেখতে চাই এই বদনামের পরে কারা কাজ করতে রাজি আছেন।

এসময় লাখ লাখ আশেকে রাসুল দুই হাত উঠিয়ে মেজো সাহেবজাদা হুজুরের নেতৃত্বে মোহাম্মদী ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। মেজো সাহেবজাদা বলেন, আমি অপরাধী, আমার নামে হাজার কলঙ্ক আছে। আমি ঐ কলঙ্ক মাথায় নিয়ে আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর কদমে সাক্ষী দিয়ে বলছি- এই গোলাম যতদিন বাঁচব, ততদিন আল্লাহর বন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকব। এই গোলাম যতদিন বাঁচব, আল্লাহর ইচ্ছায় নিজেকে পরিচালিত করব। আমি কথা দিচ্ছি আমার ভাই-বোনদেরকে সাথে নিয়েই এই মোহাম্মদী ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যাব। হাত নামান। আমি দোয়া করি যারা এই হাত তুলেছিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ, যারা হাত তুলেছে, আপনি দয়া করে তাদেরকে কবুল করে নিন। ওগো দয়াল রাসুল আপনি দয়া করে কবুল করে নিন।

ড. কুদরত এ খোদা বলেন, মোর্শেদ কেবলাজান আমাকে বলেছিলেন, ‘কদর! তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ আমি বলেছিলাম, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি পারব না। এটা আজ থেকে এক বছর আগের কথা। কথাটি বলতে চাইনি। আমি বলেছিলাম, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি পারব না। তিনি বলেছিলেন, তোমাকে নিতে হবে। আমি বলেছিলাম আমি ব্যবসা করি, আমি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করি। আমার নানাবিধ অসুবিধা, আমি দরবারে ফুল টাইম সময় দিতে পারব না। আমি গোলামি করি। তিনি একে একে তিনবার একথা বলেছিলেন। তখন আমি তাঁর কথার উত্তর দিতে না পেরে চুপ ছিলাম। আরো অনেক কথা, যেটা ব্যক্তিগত, আমি বলতে পারব না। আমি বললাম আমি যদি দায়িত্ব নেই, সারা দুনিয়া আমার বিপক্ষে যাবে, আমি কী করে দাঁড়াব? আমি জানতাম, এই দিন আসবে। তাঁর কদম মোবারক ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম, মাফ করে দেন। তখন তিনি বলেছিলেন- ‘যদি আমি তোমার সাথে থাকি’, আমি তবুও চুপ ছিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন- ‘যদি আমি তোমার সাথে থাকি’, আমি চুপ ছিলাম। তৃতীয়বার ধমক দিয়ে বলেছিলেন- ‘যদি আমি তোমার সাথে থাকি’। তখন আমি বলেছিলাম-আমার স্ত্রী আপনার নামে কোরবান হোক, আমার সন্তান আপনার নামে কোরবান হোক, আমি গোলাম আপনার নামে কোরবান। বাকি জীবন আপনার ইচ্ছায় পরিচালিত হবো। আপনি যেভাবে বলবেন, যে পথে চলতে বলবেন, সেই পথে চলব। আপনারা জানেন, সাঈদুরের ফেতনা এবং পরবর্তীতে আজ পর্যন্ত একের পর এক কাজ করে গিয়েছি। মোর্শেদের সন্তুষ্টি ও তাঁর ইচ্ছা বাস্তাবায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করছি।

ড. মেজো হুজুর বলেন, সেজো সাহেবজাদা হুজুর বলেছেন, কোনো আওলাদ ছোটো নয়। আমার লিখিত কিতাব ‘মোর্শেদের দরবারে মুরিদের করণীয়’ পড়বেন। সেই কিতাবে লিখেছি- মোর্শেদের আওলাদ মোর্শেদের সম্মানে সম্মানিত। মোর্শেদের আওলাদ তরিকতের ইমামকে যদি আপনারা কেউ অসম্মান করেন, মূলে আপনি মোর্শেদকেই অসম্মান করলেন, যদি সে ফেতনাকারী না হয়। এই হাদিস আবার আপনারা নিয়ে তাহমিনার (সাঈদুরের স্ত্রী) বেলায় দিবেন না। সে ফেতনাকারী মোনাফেক, তার জন্য এটা নয়। অতএব মোর্শেদের প্রত্যেকটি আওলাদকে সম্মান করা, তাদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা এবং তাদেরকে নিয়ে আমাকেসহ এগিয়ে যাওয়াটাই মোহাম্মাদী ইসলাম। মোর্শেদের আওলাদদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখাও আমার দায়িত্ব। তাই আমার তিন ভাই দুই বোনসহ এই ছয়জনের, আমি ছাড়া বাকি পাঁচজনের সম্মান অক্ষুন্ন রাখাও আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মোর্শেদ এটাও আস্থা রেখেছিলেন, আমি তাঁর সন্তানদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখব। তাই আমি সকলের কাছে, সকল ভাই ও বোনদের কাছে অনুরোধ করি- ওনারা অলী-আল্লাহ, এতে কোনো সন্দেহ নাই। হয়ত কাজের জন্য আমি সামনে এগিয়ে এসেছি, এটা সত্য। মোর্শেদ ভালোবেসেছেন, আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় নেতৃত্ব আমাকে দিয়েছেন। তাই কোনো আওলাদকে অসম্মান করে, কোনো আওলাদকে ছোটো করে, আঘাত করে কোনো কথা বলা যাবে না, তাদেরকে মানতে হবে, তাদের থেকে দিক নির্দেশনা নিতে হবে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম, কথাবার্তায় কোনো আওলাদ যেন কষ্ট না পান।

ইমাম ড. কুদরত এ খোদা বলেন, আপনাদের অন্তরের জ্বালা নিবারনের ঘোষণা দিতে চাই। যারা মোর্শেদ কেবলাজানকে গত ৪০ দিন দেখতে পারেননি। আমরা আগামীকাল (৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর রওজা শরীফ আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। আপনাদের জন্য আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন রওজা শরীফ খোলা থাকবে। আপনাদের যার যখন সুযোগ হয়, আল্লাহর বন্ধুর কদমে আসবেন। দয়াল মায়ের কদমে যাবেন। নিজেদের মনের আশাগুলো ব্যক্ত করবেন। আপনাদের জন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিচ্ছি আগামীকাল ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রওজা শরীফ সর্বস্তরের আশেকে রাসুলদের জন্য উন্মুক্ত। আমি আরো একটু বলতে চাই, যেহেতু করোনা মহামারি আছে, তাই রওজার ভিতরে এক সাথে ১০০ জনের বেশি আশেকে রাসুল ঢুকতে পারবে না। সিরিয়াল লম্বা হতে পারে একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, মাস্ক পরিধানের কারণে আমরা চেহারা চিনতে পারি না। মোর্শেদের অছিয়তে শুধু কদরের কাছে নেতৃত্ব নয়, আরো দিক নির্দেশনা আছে। আর বিশ্বাস করেন অছিয়তটা শুধুমাত্র আগের দিন নয়। উনি প্রায় এক মাসব্যাপী আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি দিনে দিনে আস্তে আস্তে আপনাদের সাথে বিষয়গুলো আলোচনা করব। আমরা কেন রওজা শরীফ একটু দেরি করে খুলেছি। আপনারা জানেন, মোর্শেদ কেবলাজানের রওজা শরীফের পাশে ছিল হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর রওজা শরীফ। আপনারা দেখেছেন রওজা শরীফে মোর্শেদ কেবলাজানকে শায়িত করার কোনো জায়গা ছিল না। সেজন্য মোর্শেদ কেবলাজানকে শায়িত করার জন্য দয়াল মায়ের রওজা শরীফের পাশের ঘর ভেঙে আমরা মোর্শেদকে তখন শায়িত করি। গত ৪০ দিনে আমি নই, আমার কর্মী ভাইয়েরা যাদের কাছে চিরঋণী, যাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। দিন রাত এক করে এই রওজা শরীফকে আপনাদের জিয়ারতের জন্যে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিশ্বাস করেন- রাত্র দুইটায় ফোন করেছি, ছেলেরা তখনও দেখি কাজ করছে। তাদের ঘুম নেই। যাদের এই পরিশ্রমে আজ এই ৪০ দিনে, যে কাজ কমপক্ষে তিন মাসের, অথচ আমরা ৪০ দিনে সম্পন্ন করে আপনাদের হাতে দিতে পেরেছি। আমার কর্মীরা যারা এই রওজায় কাজ করে আমাদের জন্য খুলে দিয়েছেন তাদের সবাইকে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর লক্ষ মানুষের স্বপ্ন রওজায় যেতে চায়, আজ তা উন্মুক্ত হচ্ছে। আমি দোয়া করি-আল্লাহ যাতে তাদের এই গোলামিকে কবুল করে নেন। আমি দোয়া করি আল্লাহ যাতে তোমাদের এই পরিশ্রমকে কবুল করে নেন। সকলের কাছে এটাই অনুরোধ, আগামীকাল থেকে রওজা শরীফ আমাদের জন্য উন্মুক্ত আছে। আজকে আমরা ভার্চুয়ালি রওজা শরীফের জিয়ারত করব। আপনারা আজকে রওজা শরীফ দেখতে পাবেন। সবাই এই প্ল্যাটফর্মেই দেখতে পাবেন। এখান থেকে আমার সাথে আজকে সবাই জিয়ারত করবেন। তারপরে আপনি আপনার সময় মতো হযরত দয়াল মা (রহ.) এবং হযরত দয়াল বাবা (রহ.)-এর রওজা শরীফে জিয়ারতে আসবেন। হাজির হয়ে আপনারা আপনাদের মতো করে জিয়ারত করে যাবেন।

ড. কুদরত এ খোদা বলেন, এই মোহাম্মদী ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু আমরা ৪ ভাই বা ২ বোন নয়, আপনাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, আপনারা হলেন দেওয়ানবাগীর আত্মার সন্তান। আপনি কি দেওয়ানবাগীকে আত্মার পিতা হিসেবে মানেন? আপনি কি দয়াল মাকে আত্মার মাতা হিসাবে মানেন? তাহলে এই মোহাম্মদী ইসলাম শুধু আমার দায়িত্ব নয়, আমাদের ভাইবোনদের নয়, আপনারও দায়িত্ব। তাই সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- মোহাম্মদী ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই আমি বলে দিবো কোন পথে আপনি চললে মোহাম্মদী ইসলাম আগাবে। কিন্তু চলতে হবে আপনার। আমি মোর্শেদের দেহ মোবারক পাশে নিয়ে অঙ্গীকার করেছিলাম এবং সেই অঙ্গীকার আজও পালন করছি। তাই সকল আশেকে রাসুলের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই, রওজা মোবারকের আজকে জিয়ারতের মাধ্যমে প্রথম জিয়ারত শুরু এবং এখান থেকে অঙ্গীকার করে যাব মোর্শেদের ইচ্ছায় বাকি জীবন এই মোহাম্মদী ইসলামকে সামনে অগ্রসর করে নিয়ে যাব।

ড. মেজো হুজুর বলেন, আজকে আসলে দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা নয়। আজকে মোর্শেদের জন্যে আহাজারি করার দিন। মোর্শেদের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা সেটা মোর্শেদকে দেখানো। মোর্শেদের জন্য দোয়া করলে সেই দোয়ায় নিজেই উপকৃত হওয়া যায়। আমরা আজকে সবাই একসাথে বসে দোয়া করব। আমি জানি আপনারা দরবার শরীফ, খানকাহ শরীফ এবং বাড়িতে বাড়িতে তাবারুকের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি আমাদের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফ থেকেও আজকে চেহলামের তাবারুকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা দরবার, খানকাহ অথবা বাড়িতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না তারা দরবার শরীফ থেকে তাবারুক গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে আমরা জিয়ারতে চলে যেতে চাই। আমি আমার টেকনিক্যাল টিমকে বলছি, আমরা সরাসরি রওজা শরীফ দেখাতে চাই। সরাসরি রওজা শরীফে গিয়ে আমরা জিয়ারতে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি টেকনিক্যাল টিমকে বলছি, রওজা শরীফ দেখাতে, যাতে আল্লাহর বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর লক্ষ মুরিদ সন্তান তাদের মনের কাকুতি মিনতি করে দয়াল বাবাজানের নিকট পৌঁছাতে পারেন। এখন আমরা মোর্শেদ কেবলাজানের রওজা শরীফ জিয়ারত করব। যিনি মোর্শেদের ঐ নুরানি কদম মোবারকে সালাম করেছিলেন, আজ ঐ রওজায় সালাম করেন। অন্তরের অন্তঃস্থলের ভালোবাসা দিয়ে বলুন- ওগো দয়াল মোর্শেদ! আমাদের সালাম দয়া করে কবুল করুন। আমি পর্দার পিছন থেকে আপনাদের জন্যে জিয়ারত শুরু করছি।

পরিশেষে ইমাম ড. কুদরত এ খোদা বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম বলা আছে, কীভাবে সালাম পৌঁছাতে হবে লেখা আছে। আপনারা প্রথম দিকে ওটা দেখে দেখে জিয়ারত করবেন। পরবর্তীতে প্র্যাকটিস হয়ে গেলেতো না দেখেই বলতে পারবেন। আগামিকাল থেকে আপনাদের সকলের জন্যে রওজা শরীফকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। আপনারা আশেকে রাসুল ভাই ও বোনরা সকলেই যে যখন সুযোগ পান, রওজা শরীফ জিয়ারত করতে পারবেন। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগীর একজন নিকৃষ্টতম গোলাম, রাসুলের একজন নিকৃষ্টতম গোলাম, মহান রাব্বুল আলামিনের সর্ব নিকৃষ্টতম গোলাম আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
মেজো সাহেবজাদা হুজুর তাঁর বক্তব্য শেষে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র চেহলামের অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন।

16 COMMENTS

  1. অনেক ভালো লাগলো।
    অলিআল্লাগনের বানী মোবারক ই অসাধারন। বোঝার মতো–+

  2. মারহাবা খুব সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। যা থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। এবং আপনার নির্দেশ মোতাবেক বাকী জীবন চলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

  3. দেওয়ানবাগী হুজুর আশেকদের অন্তরে থাকবেন অনন্ত কাল। তার শিক্ষা পেয়ে মানুষ মুমেন ও ইমান্দার হচ্ছে আমি নিজে বাস্তবতায় দেখেছি।

  4. AR SONJOY DAS ওগো দয়াময় দয়াল দরদী মহান মোর্শেদ এই নিকৃষ্ট গোলামেরা যেনো আপনার নির্দেশিত পথে পরিচালিত হতে পারি আপনার ইমামের উসিলায় দয়া ভিক্ষা চাই, এবং এই নিকৃষ্ট গোলামদের অতীতের সকল ভুল বেয়াদবির জন্য আপনার নূরের পরশময় পবিত্র কদম মোবারকে ক্ষমা চাই এবং আপনার দয়া ভিক্ষা চাই দয়াময়।

  5. মহান মোর্শেদ দয়া করে আমাদেরকে তার পবিত্র ওসিয়াত নামা অনুযায়ী চলার তৌফিক ভিক্ষা দান করুক আমিন।

  6. শত কোটি কদমবুসি জানাই মহান মোর্শেদের পবিত্র কদম মোবারকে । আমি অধম যেনো দয়াল মোর্শেদের দিক নির্দেশনা মেনে চলতে পারি।আমিন

  7. আলহামদুলিল্লাহ

  8. মহান মোর্শেদ দয়া করে আমাদেরকে তার পবিত্র ওসিয়াত নামা অনুযায়ী চলার তৌফিক ভিক্ষা দান করুক আমিন।

  9. বাবাজানের অছিয়ত নামা মেনে চলবো কোন ফেৎনার মাঝে জরাবোনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here