রোজার শিক্ষা উত্তম চরিত্র গঠন

1
425

রমজানের রোজা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সক্ষম নর-নারীর জন্য ফরজ। পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজানকে রহমত ও বরকতপূর্ণ মাস হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে, যাতে এ মাসে রোজা পালনের মতো কঠিন ইবাদত করে উম্মতে মোহাম্মদি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। এছাড়া এ মাসের ২৭ তারিখ রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হিসেবে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন। সুতরাং এই মাসটি উম্মতে মোহাম্মদির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন, ‘‘সওম একটি নিষ্কাম ধর্ম-কর্ম, আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ বান্দার সিয়ামের কৃচ্ছ্র সাধন প্রত্যক্ষ করে না। দ্বিতীয়ত, এটি আল্লাহর দুশমনকে পরাভূত করার উত্তম উপায়। কারণ আল্লাহর দুশমন শয়তানের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের বাহন মানুষের প্রবৃত্তি, তা পানাহার এবং যৌন সম্ভোগের দ্বারাই উদ্দীপিত ও উত্তেজিত হয়। প্রবৃত্তি পরায়ণতার আখড়াগুলোতেই শয়তানের প্রাচুর্য এবং এখানেই তার পরিপুষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধি সাধিত হয়। যতক্ষণ এগুলো সোচ্চার থাকে এবং ফলদায়ক বিবেচিত হয় ততক্ষণ এতে শয়তানের গতিবিধি অব্যাহত থাকে। এক্ষেত্রে শয়তানের প্ররোচনা যত অধিক হতে থাকবে, আল্লাহর মহিমা তাঁর বান্দা থেকে তত বেশী ঢাকা পড়বে। ফলে সেই বান্দার পক্ষে আল্লাহর দিদার লাভ করা সম্ভব হবে না।’’ এজন্য হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘‘শয়তান যদি মানবতার চতুষ্পার্শ্বে ঘুরে না ফিরতো তবে আল্লাহ্ সম্পর্কে মানুষের ধ্যান-ধারণা দুর্বার হয়ে উঠতো।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সওমের কৃচ্ছ্র সাধনা আল্লাহর ইবাদতের তোরণ।’’ শয়তানকে পরাভূত করার উত্তম ইবাদত হচ্ছে সিয়াম সাধনা। নফসের তাড়না আর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকার জন্য রোজাই হচ্ছে অন্যতম হাতিয়ার। রমজানের রোজা যেহেতু মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধতা আনয়ন করে, তাই এ ইবাদতটি অতি উত্তম ইবাদত। প্রত্যেক মানুষের মাঝে দু’টি আত্মা বিরাজিত। একটি রূহ বা মানবাত্মা এবং অপরটি নফস বা জীবাত্মা। ‘রূহ’ আল্লাহ্ পাকের পবিত্র আমানত। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘‘আমি তাঁর মাঝে (হযরত আদম আ.) আমার রূহ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছি।’’ আমরা হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান হিসেবে আমাদের মাঝেও আল্লাহ্ পাকের পবিত্র আমানত রূহ বিরাজিত। রূহ কখনই পাপাচারের ইন্ধন জোগায় না, নফস বা জীবাত্মা পাপাচারের ইন্ধন জোগায়। জীবাত্মা মূলত আল্লাহ্ পাকের নির্দেশিত পথেই চলতে চায়। কিন্তু কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎষর্য এই ষড়রিপুর তাড়নায় নফস পাপাচারে লিপ্ত হয়ে থাকে। নফসের সাথে যখন যে রিপু মিশে যায়, নফস তখন সেই রিপুর রূপ ধারণ করে। রোজা এমন একটি ইবাদত, যা নফসের ক্ষতিকারক রিপুগুলোকে জালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে কলুষিত নফসকে পরিশুদ্ধ নফসে পরিণত করে। যিনি পরিশুদ্ধ নফসের অধিকারী তিনি উত্তম চরিত্রেরও অধিকারী। আর উত্তম চরিত্রের মানুষ কখনোই পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে না। রমজানের এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারলে বছরের বাকী মাসগুলোতেও তা কার্যকর থাকবে। তাই আমাদের রোজা পালনের লক্ষ্য হোক উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here