কৃষি ডেস্ক: গাছে গাছে লিচু পেকে আছে। গাছ ও বাগান মালিকরা ব্যপারী খুঁজলেও পাচ্ছেন না। সরকার আম-লিচুসহ মৌসুমি ফল বাজারজাতকরণের আশ্বাস দিলেও চাষিরা বলছেন, এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো লোকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
বাজারব্যবস্থা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে লকডাউন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকেই এ ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যপারী বা ফড়িয়াদের সঙ্গে বাগান মালিকদের লিংক করে দেওয়া এবং ব্যপারীরা যাতে কোনো বাধা ছাড়া নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ বাগান মালিক-ফড়িয়া-ব্যপারী-পাইকার ও খুচরা বিক্রেতদের মধ্যে যোগসাজশ একমাত্র সরকারই করতে পারে।
শুধু লিচু চাষি নন, সব চাষিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যপারীরা বা ফড়িয়াদের সঙ্গে বাগান মালিকদের লিংক করে দেওয়া এবং ব্যপারীরা যাতে কোনো বাধা ছাড়া নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেন, সে ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী চাষিদের আশ্বস্ত করেন যে, দেশের খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্যের সঠিক বিপণন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, চাহিদা মোতাবেক সহজলভ্যতা তৈরি এবং জরুরি অবস্থায় ফুড সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের প্রথম উন্মুক্ত কৃষি মার্কেট অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারলে লিচু চাষিদের আর চিন্তা করতে হবে না।
সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, পণ্য সাপ্লাই চেইন ভেঙে যাওয়ায় কোনো চাষিই তার পণ্যটি বিক্রি করতে পারছেন না। শুধু লিচু চাষি নন, সব চাষিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যপারীরা বা ফড়িয়াদের সঙ্গে বাগান মালিকদের লিংক করে দেওয়া এবং ব্যপারীরা যাতে কোনো বাধা ছাড়া নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেন, সে ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব জেলায় লিচুর ভালো উৎপাদন হয়েছে, সেসব জেলার জেলা প্রশাসকরা চাষিদের এই ফল বাজারজাতকরণে উদ্যোগ নিতে পারেন। যেমন একজন ব্যপারী দিনাজপুর থেকে লিচু এনে যেন ঢাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য তাকে একটি টোকেন দিতে পারেন জেলা প্রশাসক। পথে কোনো সমস্যা হলে এই টোকেন দেখালে যেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় যেন কোনো প্রকার হ্যাজার্ড (বিপত্তি) না হয়, সে ব্যবস্থা করলে ফল বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা হবে না।
করোনার এই সময়ে মৌসুমি ফল মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই প্রয়োজন। লিচু বাগান মালিক ও চাষিদের সঙ্গে পাইকারদের যোগসাজশ করে দিলে বাগান মালিকরা তাদের লিচু ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, অন্যবার এ সময় বাগান বিক্রি হয়ে যেত। এই সময় সেই টাকা দিয়ে ধার-দেনা পরিশোধ করার পরও বিভিন্ন কাজে লাগানো যেত। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীরা নামেননি। ফলে অধিকাংশ বাগান মালিকই বাগান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।