শিশু অধিকার ও ইসলাম (পর্ব ১৮): ছোটরাও পাবে সম্মান

0
182
শিশুদেরকে ঘরে যতটা সম্ভব সক্রিয় রাখতে হবে ।

শিশু ডেস্ক: শিশুকে কোনোভাবেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। শিশুকাল থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়,মাতৃগর্ভ থেকেই একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ শুরু হয়। মা-বাবা বা অভিভাবকরা কিভাবে শিশুকে লালন-পালন করছে তার ওপরও ব্যক্তিত্বের অনেকখানি নির্ভর করে। বড়দেরকে দেখে শিশুরা শেখে এবং বড়রা যদি অন্যকে সম্মান করে তাহলে তাদের মধ্যেও অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ্ নিজেই মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছন।

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়: তারা যা দেখে তা আত্মস্থ করে। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি তাদের কোমল মনে স্থায়ীভাবে রেখাপাত করে। এর প্রতিফলন ঘটে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা কাজে-কর্মে,সারা জীবনের আচার-আচরণে। শিশুদের কোমল ও দয়াপূর্ণ আচরণ তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের সবার কাছ থেকে ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া শিশুর মৌলিক অধিকার। এ অধিকার শিশুর কল্যাণ ও তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, দয়া ও মমতা হলো আল্লাহ্ তায়ালার একটি গুণ। তিনি এই স্নেহ-মমতা মা-বাবার অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন। ফলে মা-বাবা তাদের সন্তানকে ভালোবাসে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের মধ্যেও শিশুদের দুষ্টুমি সহ্য করেছেন। শিশুদের ওপর ক্ষুব্ধ না হয়ে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করেছেন। ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদের নিয়ে এশার নামাজ আদায় করছিলেন। তিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন শিশু হাসান (রা.) ও হোসেন (রা.) তার পিঠের ওপর উঠে বসলেন। রাসুলে খোদা (সা.) সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময় তাদের পেছনে থেকে কোমলভাবে ধরলেন এবং পাশে বসালেন। যখনই তিনি সিজদায় যাচ্ছিলেন তখনি তারা তাঁর পিঠে উঠে বসছিলেন। এভাবে নামাজ শেষ করে তিনি তাদের দুই জনকে নিজের ঊরুর ওপর বসিয়েছিলেন।

দুষ্টুমি করলেও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান-হোসেনকে ধমকাননি, তিরস্কার করেননি; বরং স্নেহের সঙ্গে তাঁদেরকে তাঁর কোলে বসিয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে, শিশুদের সঙ্গে কোমল ও দয়াপূর্ণ আচরণ তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। অনেকেই শিশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাকে নিজের জন্য অসম্মানজনক বলে মনে করেন। কিন্তু এটা ইসলামের রীতি নয়। আসলে অন্যকে সম্মান করলে কখনোই নিজের সম্মান কমে না। বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ (সা.) শিশুদেরকে প্রথমে সালাম দিয়েছেন। ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, ‘একবার কয়েকজন শিশু একসঙ্গে খেলছিল। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’

সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ ও পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে শিশুদেরকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে, তাদের প্রতি স্নেহপরায়ণ হতে হবে, তাদেরকেও সম্মান দেখাতে হবে। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না আর বড়দের সম্মান করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্গত নয়।”

মনে রাখতে হবে, শুধু নিজের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি সম্মান, স্নেহ ও ভালোবাসা দেখাতে হবে। যেসব শিশুর বাবা বেঁচে নেই কিংবা বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই, সেসব অনাথ শিশুদের প্রতিও মমত্ববোধ প্রকাশ করতে হবে। পথশিশুরাও মানুষ তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে চলবে না। তাদের ওপরও নির্যাতন করা যাবে না।

অনেকে আছেন যারা অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে ইসলামকে বাস্তবিক অর্থে বুঝতে পারে না। অনেকে ইসলামকে মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো পালনীয় ধর্ম বলে মনে করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম হচ্ছে সর্বজনীন ধর্ম। মানবতার ধর্ম ইসলামে সমাজের ধনী, দরিদ্র, ছোট বড় সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার এবং কর্তব্যের কথা রয়েছে। মহানবি হযরত মোহাম্মাদ (সা.) হচ্ছে বিশ্বের সব মানুষর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। এটি তাঁর সুমহান চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিশুদের প্রতি মহানবি (সা.)-এর ভালোবাসা ও সম্মানের কারণে তারাও মহানবি (সা.)-কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এ কারণে মহানবি (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়িতে ফিরতেন তখন শিশুরা তার আগমনের পথে গিয়ে অপেক্ষা করতো এবং সাদরে অভ্যর্থনা জানাত।

মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানও শিশুদেরকে অসম্ভব রকমের স্নেহ করেন ও ভালোবাসেন। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও প্রায়ই তাঁর কাছে আসা ছোট ছোট সোনামণিদের সঙ্গে নির্মল হাসি দিয়ে কথা বলতে দেখা যায়, তাদেরকে আদর করে দিতে দেখা যায় দেওয়ানবাগী হুজুরকে। ছোট শিশুরাও দেওয়ানবাগী হুজুরকে নিজেদের প্রণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। নিজেদের টিফিনের টাকা জমিয়ে বা রিকশা খরচ বাঁচিয়ে উপহার কিনে বা ফুল কিনে তারা ছুটে আসেন তাদের ‘বাবাজান’ দেওয়ানবাগী হুজুরের কাছে। যখন তারা দেওয়ানবাগী হুজুরের কাছে সেই উপহারগুলো তুলে দিতে পারেন তখন তাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকে না।

যারা ভাবেন কেবল শিশুরাই সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাবে বড়দের কোনো দায়িত্ব নেই তারা ভুল করছেন। শিশুদের অন্তরের ভালোবাসা পেতে হলে তাদেরকে ভালোবেসে, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের মন জয় করতে হবে।  

মনে রাখতে হবে, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা দয়াহীনতার অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে নিষ্ঠুরতা ছড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ্ তায়ালার দয়া পেতে চাইলেও মানুষকে দয়াশীল হতে হবে। এ কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে হৃদয়হীন বা নির্দয় ব্যক্তিরা সবচেয়ে বড় হতভাগ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here