নারী ও শিশু ডেস্ক: ইসলাম ধর্মে নারীর গর্ভে থাকা ভ্রূণের যত্ন ও গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি এতোটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, রোজার মতো ফরজ ইবাদতের ক্ষেত্রেও গর্ভবতী মায়ের জন্য ছাড় রয়েছে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ হলেও গর্ভবতী নারী ও গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তার রোজা রাখার দরকার নেই। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ওই রোজার কাজা আদায় করে নিতে হবে।
জন্মের পর শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষটি হচ্ছেন মা এবং সর্বোত্তম খাবার হচ্ছে মায়ের দুধ। প্রত্যেক নবজাতকের জন্য মায়ের বুকে দুধ আসার ব্যবস্থা করে রেখেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। নবজাত শিশুর নাজুক অবস্থার জন্য তা বিশেষ উপযোগী। মায়ের দুধ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করে। দুধ খাওয়ার সময় মায়ের আচার-আচরণ ও বৈশিষ্ট্যও অনেকটা রপ্ত করার চেষ্টা করে শিশু। মায়ের দুধ কেবল শিশুর জন্যই উপকারী নয়,তা মায়ের শরীর-মনের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ কারণে জন্মের পর শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে বলা হয়েছে।
শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ খাওয়াবে, যদি কেউ দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের বাবার দায়িত্ব হলো, (সন্তানের) মায়ের খোর-পোষের ব্যবস্থা করা (যদি তাদের মধ্যে তালাকও হয়ে যায়)। কাউকে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন করা হয় না। বাবা ও মা তাদের মধ্যে বিরোধ বা মতপার্থক্যের কারণে শিশুকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারবে না। আর ওয়ারিশদের পক্ষ থেকেও এই কাজ করতে হবে এবং যদি বাবা-মা পরস্পরের সম্মতিক্রমে দুই বছরের আগেই দুধ ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাতে তাদের কোনো অপরাধ নেই।
মায়ের বুকের দুধ হচ্ছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানযুক্ত এমন এক খাবার যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে। একইসঙ্গে শিশুর শরীর সহজেই কাজে লাগিয়ে দেহের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতর খাদ্য চাহিদার যে পরিবর্তন ঘটে মায়ের বুকের দুধের উপাদানে একই ধরনের পরিবর্তন ঘটে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তাই শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুর শরীরের জন্য যে তাপমাত্রা উপযুক্ত বুকের দুধে ঠিক সেই তাপমাত্রাই পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মায়ের বুকের দুধে বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে যা শিশুকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে ভূমিকা রাখে। মায়ের দুধের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নবজাত শিশুর সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে ওঠার মূল উপাদান। রোগ-প্রতিরোধে মায়ের দুধ সর্বশ্রেষ্ঠ খাদ্য ও পানীয়। মায়ের দুধ পানে শিশুদের স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, চোখের জ্যোতি, আচার-ব্যবহার, সামাজিকতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা সুন্দরভাবে বিকাশ লাভ করে।
মায়ের দুধ খেলে শিশুর মৃত্যু হার অনেক কমে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে মায়ের দুধ শিশুর অধিকার। তার এ অধিকার কোনোভাবেই খর্ব করা যাবে না। কোনো কারণে মা দুধ খাওয়াতে না পারলে অথবা দুধ দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিশুর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, দুধ দেওয়ার অবস্থায় রয়েছেন এমন কোনো নারীর সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হওয়া এবং দুধ দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ পরিশোধ করা। ধর্ম এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বারবার বলা হলেও ইসলাম ধর্মে মাকে এ অধিকার দেওয়া হয়েছে যে, তিনি না চাইলে অথবা অক্ষম হলে শিশুকে নিজের বুকের দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে শিশুকে দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকার অধিকার তার মায়েরও নেই। দুধ দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া না গেলে, শিশুর বাবা অন্য নারীকে দুধের জন্য অর্থ দিতে না চাইলে, শিশু তার মা ছাড়া অন্য কোনো নারীর দুধ খেতে না চাইলে এবং অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবন্ধ নারী দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিলে তখন মায়ের জন্য ওই শিশুকে দুধ দেওয়া আবশ্যকীয় হয়ে যায়।
তবে পবিত্র কুরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শিশুর মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টির ব্যবস্থা করা সন্তানের পিতার দায়িত্ব। বাবাকে অবশ্যই শিশুর মায়ের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে হবে যাতে শিশুর পুষ্টি ও যত্নে কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোটা মায়ের জন্যও উপকারী। সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মা নিজেও উপকৃত হন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব মা তাদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জরায়ু তাড়াতাড়ি গর্ভধারণের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। গর্ভধারনের সময় মায়ের শরীরে যে চর্বি জমা হয় দুধ খাওয়ানোর কারণে তা কমে আসে। আর তা মায়ের শারীরিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। যে মায়েরা শিশুকে দুধ পান করান তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কম। সর্বোপরি বুকের দুধ খাওয়ালে মা ও শিশুর মাঝে এমন এক আত্মিক বন্ধন তৈরি হয় যা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।