সূফী সম্রাটের সংস্কার : সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন সম্ভব

0
440

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর উপর রমজান মাসের রোজা পালন করা ফরজ। তবে এজন্য সুস্থ থাকা শর্ত। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো; যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)

আমরা সকল ইবাদত করার ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যেমন- নামাজের সময় হলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মোয়াজ্জেন আযান দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে আমরা সূর্যের অবস্থান কোথায়? তা নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় রোজা ও ঈদ পালনের ক্ষেত্রে। রমজান মাসের রোজা এলেই আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, কখন চাঁদ উঠবে।

উল্লেখ্য যে, আমরা প্রতিবছরই দেখতে পাই, সৌদি আরবে যেদিন রোজা পালিত হয়, তার পরের দিন আমাদের বাংলাদেশে রোজা রাখা শুরু করা হয়। অথচ সৌদি আরবের সাথে আমাদের সময়ের ব্যবধান মাত্র ৩ ঘন্টা। এই সামান্য ব্যবধানে আমরা সৌদি আরবের ১ দিন পরে রোজা শুরু করি আবার ১ দিন পরে ঈদ পালন করি। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর পূর্ব থেকে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের যথাযথ দলিল প্রমাণ দিয়ে একই তারিখে বিশ্বের সর্বত্র রোজা ও ঈদ পালনের গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি চাঁদ দেখা নয়, গণনা করে শুধু সময়ের ব্যবধানে একই তারিখে রোজা ও ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের উপর জোর দিয়েছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বলেন- সৌদি আরবের সাথে আমাদের সময়ের ব্যবধান মাত্র ৩ ঘন্টা। এই ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ২৪ ঘন্টার একটি দিন পাল্টে যেতে পারে না। তাছাড়া আমরা শুক্রবার দিন জুমার নামাজ পড়ি, সৌদি আরবসহ বিশ্বের সবদেশেই শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করা হয়। কেউই শনিবার জুমার নামাজ পড়ে না। অথচ রমজানের রোজা পালনের ক্ষেত্রে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। কবে বাংলাদেশের সীমানায় চাঁদ দেখা যাবে। ঈদের সময়েও ঠিক একই অবস্থা। অথচ রোজার দিনে পানাহার করা হারাম, আবার ঈদের দিন রোজা রাখাও হারাম। তাহলে সৌদি আরবে যেদিন প্রথম রোজা পালিত হচ্ছে, আমরা সেদিন পানাহার করে হারাম কাজটি করছি। আবার সৌদি আরবে ঈদ পালিত হচ্ছে; আমরা সেদিন রোজা পালন করছি। অথচ ঈদের দিন রোজা পালন করা হারাম। আমরা রোজা শুরু ও শেষ এই দুই অবস্থায়ই হারাম কাজটি করছি।’

এর সুষ্ঠু সমাধান দেওয়ার জন্য মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেছেন- মাত্র ৩ ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে শুক্রবারে যদি আমরা জুমার নামাজ আদায় করতে পারি (শনিবারে কোথাও জুমার নামাজ হয় না), তাহলে সৌদি আরবের সাথে একত্রে রোজা ও ঈদ পালন করতে না পারার কি কারণ থাকতে পারে?
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী আরো যৌক্তিক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন- আমরা জানি ১০ মহররম শুক্রবার পৃথিবীতে কিয়ামত সংঘটিত হবে। এখন শুক্রবার কিয়ামত হলে বাংলাদেশে কি একদিন পরে শনিবারে কিয়ামত হবে? বাংলাদেশের মানুষ সৌদি আরবের পরে কিয়ামতের জন্য আরো ১ দিন সময় পাবে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর ব্যাপার বৈ কিছু নয়। বিশ্বের কোনো দেশে ১৮ ঘন্টা আবার কোনো দেশে ২২ ঘন্টা দিন থাকে। সে দেশগুলোর মানুষ রোজা পালন করবে কীভাবে? উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু, যেখানে ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত থাকে। সেখানকার মানুষ কীভাবে রোজা পালন করবে? তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে এমন একদিন হয়তো আসবে, যখন চাঁদে অথবা মঙ্গলে বা অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস করবে। তাদের মধ্যে মুসলমান থাকলে তারা কীভাবে নামাজ, রোজা-সহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে? এ সকল জটিল বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন- যুগের ইমাম, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। তাঁর মতে যে সকল দেশে ১৮ বা ২২ ঘন্টা দিন থাকে (নরওয়ে ও সুইজারল্যাণ্ড), সেখানে ২৪ ঘন্টার অর্ধেক ১২ ঘন্টার সাথে আর ১ ঘন্টা যোগ করে ১৩ ঘন্টা রোজা রাখতে হবে। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে যেখানে ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত। সেখানে সৌদি আরবের সাথে সময় মিলিয়ে নামাজ, রোজা ও ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা (রহ.)-ও সেই একই মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন- উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর লোকজন মক্কা-মদিনা অথবা পার্শ্ববর্তি দেশের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ, রোজা পালন করবে, ঈদের নামাজ পড়বে এবং অন্য ইবাদত করবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-ও একই অভিমত প্রকাশ করেছেন।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান সময় গণনার বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- চাঁদ দেখে নয়, চাঁদের তারিখ গণনা করেই রোজা ও ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস মোতাবেক চন্দ্রবর্ষের একমাস হয় ৩০ দিনে আর একমাস হয় ২৯ দিনে। সে হিসাবে রমজান মাস হয় ৩০ দিনে। তাছাড়া আলাদাভাবে চাঁদ দেখার পরিবর্তে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা ও ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করলে মুসলমানদের মধ্যে একাধিক দিনে রোজা ও ঈদ পালনের সমস্যাটি দূর করা সম্ভব। কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের মতে চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহেও সময় হিসাব করে নামাজ রোজা পালন করতে হবে।

আল্লাহর মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বিগত প্রায় ৪০ বছর পূর্বে রোজা ও ঈদ-সহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার পরিবর্তে গণনা করার যে বিষয়টির উপরে গুরুত্বারোপ করেছেন, বিজ্ঞ আলেমগণও সে বিষয়ে বিলম্বে হলেও একমত হয়েছেন, তবে চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে। তারা যদি রোজা ও ঈদ-সহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একমত পোষন করেন, তবে সেটাই হবে উত্তম কাজ।

পরিশেষে, একথা চিরন্তন সত্য যে, ধর্মীয় সংস্কারকের কর্তব্য হচ্ছে সংস্কার করা। আর আলেম ওলামাসহ সর্বস্তরের মানুষের কাজ হচ্ছে, তা নির্দিধায় মেনে নিয়ে সে মোতাবেক কাজ করা। আর এতেই সম্ভব হতে পারে সঠিকভাবে ধর্ম পালন করা। সুতরাং চাঁদ দেখা নয়, গণনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেই সঠিকভাবে ধর্ম পালন করা সম্ভব হবে এবং এতেই ধর্মপালনে শান্তি আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here