সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষার গুরুত্ব

8
461
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজান ।

আশেকে রাসুল ফজলে রাব্বী মো. ফরহাদ
মহান আল্লাহ্ মানব জাতির আদি লগ্ন হতেই তাদের পথ-প্রদর্শনের লক্ষ্যে তাদের মধ্য থেকে পথ প্রদর্শক প্রেরণ করে আসছেন। যুগে যুগেই মহামানবগণের আগমন ও বিদায়ের মধ্যবর্তী সময় বেশি বিপর্যয় নেমে এসেছে। যার বাস্তবতা রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর আগমন কাল। তদানিন্তন আরব জাতির ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ সব থাকলেও ছিল না সৎ চরিত্র ও নৈতিকতা। নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির পূর্ণতাদানের জন্যই আবির্ভূত মহানবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি ফরমান- “উত্তম চরিত্রের পূর্ণতাদানের জন্যই আমি আবির্ভূত হয়েছি।”

রাহমাতুল্লিল আলামিন আগমনের প্রাক্কালকে বলা হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। জাহেলিয়াতের যুগকে যত মন্দ বলা হোক না কেন, তাদের একটি গুণ ছিল মর্যাদাপূর্ণ মাসসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। ইতিহাস থেকে জানা যায়- জাহেলিয়াত যুগের মানুষগুলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, এই তিন মাস সকল রকম অনাচার ও যুদ্ধ বিগ্রহ হতে বিরত থাকতো।

তদানিন্তন কুরাইশগণের সামাজিক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক সূরা কুরাইশ অবর্তীণ হয়েছিল। নীতি ও নৈতিকতা হলো আশরাফিয়াতের মাপকাঠি। নীতি হলো ন্যায়সঙ্গত বা সমাজের কল্যাণকর বিধান এবং নৈতিকতা হলো নীতি বিষয়ক চরিত্রাবলি। নৈতিকতা তথা মানবতাবাদী জীবন দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ দেশপ্রেম, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, সহনশীলতা, উদারতা, শ্রমের মর্যাদা, পরিবার ও সমাজের প্রতি কর্তব্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও সাম্যের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের দ্বারাই পরিবার, সমাজ ও জাতির সর্বনাশ হয়। তাই বলা হয়- “নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষ পশুর ন্যায়।” মানুষের নৈতিকতার লালন কেন্দ্র হলো ‘ক্বালব’ বা অন্তঃকরণ। তাই তো মহানবি (সা.) ফরমান- “হে মানবমণ্ডলী সাবধান! নিশ্চয়ই মানব দেহে একখণ্ড মাংসপিণ্ড আছে, এটি শুদ্ধ হলে পূর্ণ মানব দেহ শুদ্ধ বলে গণ্য। আর সেই মাংসপিণ্ড অশুদ্ধ হলে পূর্ণ মানব দেহই অশুদ্ধ বলে বিবেচ্য।” এই নীতি নৈতিকতার মূলাধার শূন্য রেখে নীতি বাক্য বললে নীতিবান হওয়া যায় না।

আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে রাহমাতুল্লিল আলামিন পর্যন্ত নবি-রাসুলগণের আগমন হয়েছিল মানবজাতির অন্তঃকরণের চিকিৎসকরূপে। মানব সভ্যতার এই চিরন্তন শুদ্ধি পদ্ধতির ধারাবাহিকতায় নবুয়তের পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী অলী-আল্লাহ্গণ উক্ত পদ্ধতি সুচারুরূপে পরিচালনা করে আসছেন। যুগের পরিক্রমায় মানুষের সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যুগোপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে অলী-আল্লাহ্গণের আগমন হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের মহা উৎকর্ষের যুগে প্রচলিত ধর্মীয় শিক্ষা ও ইবাদতের অনুশীলন কোনোভাবেই ধর্মের নামে চলমান উগ্রতা ও সহিংসতা প্রতিহত করতে পারছে না। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাতি চরম অশান্তিতে নিমজ্জিত।

এহেন দুঃসহ পরিস্থিতিতে ধরাধামে আগমন করেছেন ইমামুল হাদি শ্রেষ্ঠ সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ ফরমান- “সেই সফলকাম হয়েছে যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করেছে, স্বীয় প্রভুর নামের জ্বিকির করেছে এবং নামাজ কায়েম করেছে।” (সুরা আ’লা ৮৭: আয়াত ১৪ ও ১৫) সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতটিকে তাঁর শিক্ষা পদ্ধতির মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে প্রতিয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্র মহা প্রজ্ঞাময় শিক্ষা কৌশল বাস্তবসম্মতভাবে তিনি গ্রহণ করেছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লার শিক্ষার মূলনীতিগুলো হলো- ১। আত্মশুদ্ধি, ২। দিলজিন্দা, ৩। নামাজে হুজুরি এবং ৪। আশেকে রাসুল হওয়া। বর্তমান বিশ্বের নৈতিক সংকট দূরীকরণে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান উক্ত শিক্ষা পদ্ধতির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা জানা এবং গ্রহণের উপকারিতা উপলব্ধি করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা প্রচলিত ধর্মীয় অনুশীলন ও অনুশাসন কোনক্রমেই মুসলিম জাতির দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারছে না। বরং ক্রমেই তা বাড়িয়ে তুলেছে। যেমন- ইয়েমেন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিশর, ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান এককথায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ জুড়ে সভ্যতার ধ্বংসলীলা চলছে। প্রচলিত নামাজ, রোজা, হজ, তসবিহ, তাবলিগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, ইবাদতখানা, খানকাহ্ কোনোটিই ফলপ্রসূ কোনো উপসর্গ দেখাতে পারছে না। এর সঠিক কারণ নির্ণয় করে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান বলেন, “ভুলে ভরা ধর্মীয় শিক্ষাই এজন্য দায়ী।” সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লার শিক্ষার মূলনীতিগুলো আল্লাহ্র দেওয়া মূলনীতির পুনর্ব্যক্ততা। প্রথম ধাপে আত্মশুদ্ধি, দ্বিতীয় ধাপে ক্বালবি জ্বিকির, তৃতীয় ধ্যাপে নামাজে হুজুরি। রাহ্মাতুল্লিল আলামিন তাঁর নবুয়তের ত্রয়োদশ বছরে নামাজের বিধান দিলেন। পূর্ণ মক্কী জীবনই ছিল আত্মশুদ্ধির অভিযান। মক্কায় সৃষ্ট পরিশুদ্ধ ৩১৩ জন সাহাবিই ছিলেন ইসলামের গৌরোবোজ্জ্বল রেনেসাঁর অগ্রপথিক।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান বলেন, “মানব জাতির নৈতিক অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে ষড়রিপু যথা- কাম, ক্রোধ, লোভ মোহ, মদ ও মাৎসর্য। তিনি বলেন, উক্ত রিপুগুলো নিয়ন্ত্রণে না আনা পর্যন্ত ইবাদত আরাধনা তো নয়ই বরং মানবিক ও নৈতিক আচরণও সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “ষড়রিপু দমনের উপায় আজ পর্যন্ত আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি, সম্ভবও নয়।”

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের তাওয়াজ্জোহতে অগণিত মানুষ পাপ-পঙ্কিলতা হতে মুক্ত থেকে রাহমাতুল্লিল আলামিনের দিদার লাভ করছে। রিপু তাড়িত মানুষ ইবাদতের যোগ্য নয়। তাইতো জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়, তা নিছক দু’আ নয়। আফসোস! মুসলিম উম্মাহ্র অধিকাংশ মানুষ ধর্মের মর্মবাণী উপলব্ধি করে না বলেই উপাসনা মহান আল্লাহ্র সাথে উপহাসে পরিণত হচ্ছে। তাইতো প্রাণহীন উপাসনা, আরাধনা, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশাসন কোনোটিই নৈতিক সংকট কাটাতে পারছে না। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান বলেন, “চরিত্র কিতাবে নয়, চরিত্র ক্বালবে। আর ক্বালব উন্মুক্ত করতে আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনীত সমকালীন যুগের মহামানবগণের মাধ্যমে করে নিতে হয়।”

বর্তমান যুগ জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেও নৈতিকতা ও অবক্ষয়ের কারণে সাধারণ মানুষ অসহায়। নিরক্ষর শ্রেণি গোষ্ঠীর চেয়ে, শিক্ষিত সমাজে নৈতিকতা বিপর্যয় বেশি পরিলক্ষিত হয়। সুদ, ঘুষ, জালিয়াতি, প্রতারণা, ইভটিজিং, ব্যাভিচার, বলাৎকার, গীবত, মিথ্যাচার, দেশদ্রোহিতা, কালোবাজারী, মজুদদারী, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ গোটা সমাজকে গ্রাস করে বসেছে। উক্ত অসৎ চরিত্র হতে নিরাময় হতে না পারলে এই নব্য জাহিলিয়াত সকলকে আঁধারে নিমজ্জিত করবে। সভ্যতার নৈতিকতার এহেন সংকটকালে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান নৈতিক ও মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ গড়ার শিক্ষকরূপে ধুলির ধরায় আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর প্রদর্শিত আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দলে মানুষ আশেকে রাসুলে পরিণত হচ্ছেন। এটি হযরত রাসুল (সা.)-এর যুগের প্রতিচ্ছবি। তদানিন্তন আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে হতাশা ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ শান্তির আশ্রয়স্থল রাহমাতুল্লিল আলামিনের কদম পাকে গিয়ে মহান আল্লাহ্র রেজামন্দি হাসিল করত পার্থিব অশান্তি হতে রেহাই পেয়ে পারলৌকিক মুক্তির পথ সুগম করেছিল।
[লেখক : রিলিজিাস টিচার, মুসলিম মডার্ণ একাডেমী, ঢাকা সেনানিবাস।]

8 COMMENTS

  1. সত্যিই অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে দেওয়ানবাগী হুজুর আলোচনা করলেন খুব ভালো লাগলো

  2. দেওয়ানবাগী হুজুরের শিক্ষা বাস্তব জীবনে মেনে চললে একজন মানুষ উন্নত চরিত্রের অধিকারি হয়ে আশেকে রাসূল হয়ে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পেতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here