সৌরজগতের গ্রহগুলোর নামকরণ হলো যেভাবে

0
386

প্রযুক্তি ডেস্ক: সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহের নামকরণ করে থাকে International Astronomical Union (IAU) নামে একটা বিশেষ সংস্থা। সংস্থাটি ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সকল গ্রহ-উপগ্রহের নামকরণের জন্য IAU-ই একমাত্র স্বীকৃত সংস্থা। এদের প্রত্যেক সদস্যই একেকজন পেশাদার এস্ট্রোনোমার।

IAU-এর মতে জ্যোতির্বিদ্যা একটি অতি প্রাচীন বিজ্ঞান এবং এর অনেক নামকরণ আদিকাল হতে চলে আসছে বা ঐতিহাসিকভাবে প্রবর্তিত। প্রথম দিকে সৌরজগতের অল্প কিছু গ্রহের প্রাচীন নাম রোমান মিথোলজি বা গ্রিক মিথোলজি থেকে আসে। ওঅট সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেই আমাদের সৌরজগতের বাকি সকল (একমাত্র ব্যতিক্রম পৃথিবী ও চাঁদ) গ্রহ-উপগ্রহের নামগুলো ও গ্রীক ও রোমান মিথোলজি থেকেই রেখেছে।

১. মার্কারী (বুধ): ডানা বিশিষ্ট রোমান দেবতা মার্কারী (Mercury) থেকে এসেছে মার্কারী গ্রহের নাম।রোমান ‘মার্কারী’র গ্রীক নাম হার্মিস (Hermes- The God of Travelling, Commerce and Thievery)। হার্মিস হলো ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভ্রমণের দেবতা। তাকে ঈশ্বরের বার্তাবাহকও বলা হয়ে থাকে। মার্কারী বা হার্মিসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার প্রচণ্ড দ্রুতগতি। এই দ্রুতগতির বৈশিষ্ট্যের কারণে বুধ গ্রহের এই ‘মার্কারী’ নামকরণ। কারণ, বুধগ্রহও প্রচণ্ড বেগে (সেকেন্ডে ৫৬ কিমি, যেখানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে প্রতি সেকেন্ডে ৩৬ কিমি বেগে) সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।

২. ভেনাস (শুক্র): রোমান ভালোবাসার দেবী ভেনাস বা গ্রিক ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির (Aphrodite- The Goddess of love and beauty ) নামানুসারে শুক্র গ্রহের নামকরণ করা হয় এর অপার সৌন্দর্যের কারণে। আমাদের সোলার সিস্টেমের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সুন্দর গ্রহ শুক্র।

৩. আর্থ (পৃথিবী): Earthশব্দটার নামকরণের তেমন কোনো তাৎপর্যগত মানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রোটো-জার্মানিক (Proto-Germanic) শব্দ Eartho থেকে আর্থ শব্দটার উৎপত্তি । আসলে আর্থ কথাটি আরবি আর্থ শব্দ থেকে এসেছে। আরবিতে আর্থ অর্থ পৃথিবী।

৪. মার্স (মঙ্গল): রোমান যুদ্ধের দেবতা মার্স (Mars), যার গ্রিক নাম এরিস (Ares- The God of War), এর নামে মার্সের নাম করণ করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের রক্তাক্ত পরিবেশের মতো লাল হওয়ার কারণে রোমানরা মঙ্গলের এই নামকরণ করেছিলো।

৫. জুপিটার (বৃহস্পতি): ফাদার অব দ্যা গড এন্ড মেন, অর্থাৎ দেবতা ও মানুষের পিতা- রোমান গড জুপিটার।

সবাই তাকে গ্রিক, “জিউস (Zeus- The Father of All God and Men, The God of Thunder, The Ruler of Olympia)” নামেই বেশী চিনে। জুপিটারের নামকরণের কারণ কাউকে বলার প্রয়োজনই পড়ে না। জিউসের মতই প্রচণ্ড এবং বিশাল এই বৃহস্পতি গ্রহ। বৃহস্পতির (৮৮,৬৯৫ কিমি) ব্যাসার্ধ পৃথিবীর (৬৪০০ কিমি) ব্যাসার্ধের ১১ গুণ। আয়তনে পৃথিবীর ১৩০০ গুণ বড়। বৃহস্পতি এতই বড় যে এর ভর সৌরজগতের সকল গ্রহের সম্মিলিত ভরের আড়াইগুণেরও বেশী। তাই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দেবতার নামে বৃহস্পতির নামকরণ করায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বৃহস্পতির উপগ্রহগুলোর নামগুলোও জিউসের সাথে রক্তের সম্পর্কে যুক্ত গ্রিক দেবতা-দেবী/ডেমি-গডদের (অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক দেবতা) নামে রাখা হয়েছে।

৬. স্যাটার্ন (শনি): জিউস, পোসাইডন, হেইডিস এবং হেরার পিতা, অতি বিশাল টাইটান ‘ক্রনোস’ (Zeus- The Father of All God and Men, The God of Thunder, The Ruler of Olympia)-এর রোমান নাম ‘স্যাটার্ন’ থেকে শনি গ্রহের নামকরণ করা হয়। ক্রনোস হলো প্রচণ্ড নিষ্ঠুর, সন্তান ভক্ষণকারী এবং টাইটানদের রাজা। শনির উপগ্রহের নামগুলো সবটাই টাইটানদের নামে করা হয় যারা সবাই ক্রনোসের ভাই-বোন।

৭. ইউরেনাস: গ্রিক আকাশের দেবতা ইউরেনাসের নামে ইউরেনাস গ্রহের নামকরণ করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম লেসলি প্রথম ইউরেনাসের ২টি উপগ্রহ আবিষ্কার করার পর এমন একটা রীতি চালু করেন যে সবাই ইউরেনাসের উপগ্রহগুলোকে শেক্সপীয়ার এবং আলেকজান্ডার পোপের লেখা বিভিন্ন চরিত্রের নামে নামকরণ করেন।

৮. নেপচুন: নেপচুনকে নামকরণ করা হয়েছে রোমান সমুদ্রের দেবতা নেপচুনের নামে, যার গ্রিক পরিচয় পোসাইডন (Poseidon, The God of Sea)। নেপচুনের সব উপগ্রহগুলোর নামকরণ করা হয় পোসাইডনের আত্মীয়, বন্ধু ও প্রেমিকার নামে।

৯. প্লুটো: প্লুটোকে নাম রাখা হয় মৃত্যু ও পাতালপুরীর দেবতা প্লুটোর নামে, যার গ্রিক নাম হেইডিস (Hades- The God of Death and Underworld)। কারণ যথার্থ। প্লুটোর অবস্থান এতই দূরে এবং এতই অন্ধকারাছন্ন যে প্লুটোকে পাতালপুরী/প্রেতলোক মনে করা যেতেই পারে।

ক্যারন (Charon), প্লুটোর একমাত্র উপগ্রহের নামও বেশ ড্রামাটিক। গ্রীক মিথোলজির এক নাবিক এই ক্যারন, যে মৃত্যুর পর নৌকায় করে আত্মা পাতালপুরীতে নিয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here