ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)
স্ক্যাবিস (Scabies) বা খোসপাঁচড়া একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ। সারকপটিসস্ক্যাবি (Sarcoptes scabiei) নামক এক ধরনের পরজীবী দিয়ে এই রোগটি হয়ে থাকে। স্ক্যাবিস যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এই রোগ তুলনামূলক বাচ্চাদেরই বেশি হয়। স্ক্যাবিসের জীবাণু শরীরের তুলনামূলক উষ্ণ স্থানে ত্বকের নীচে বাস করে। এরা বিশেষ করে রাতের বেলা ত্বকের নীচে চলাচল করে সেখানে তাদের বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে, ডিম পারে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
এই রোগ কিভাবে ছড়ায়?
যেহেতু রোগটি সংক্রামক, সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা যেমন: হোস্টেল, মাদ্রাসা, বোর্ডিং, শিশু সদন, এতিমখানা, জেলখানা যেখানে অনেক মানুষ একত্রে বাস করে; এসব স্থানে ঘনিষ্ঠ সাহচার্যে থাকার ফলে স্ক্যাবিসের পরজীবী খুব সহজেই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা, কাপড়-চোপড় ব্যবহারের মাধ্যমেও এই রোগ অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়াতে পারে। কারণ, এই পরজীবী শরীরের বাহিরেও অর্থাৎ কাপড়-চোপড়, বিছানা, কাঁথা-বালিশে ২-৩ দিন বেঁচে থাকতে পারে।
উপসর্গ:
এই রোগের মূল উপসর্গ হলো চুলকানি। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিশেষ কিছুস্থানে যেমন: আঙুলের ফাঁকে, কব্জির সামনের অংশে, নাভির চারপাশে, কুঁচকিতে, বগলে, জননাঙ্গে, মহিলাদের স্তন বৃন্তের চারপাশে প্রচণ্ড চুলকানি হয় এবং বিশেষ করে রাতের বেলা প্রচণ্ড চুলকায় এবং এসব জায়গায় ঘামাচির মতো ছোটো ছোটো ফুসকুড়ি দেখা দেয়। মুখমণ্ডল, মাথা, হাতের তালু ও পায়ের তলায় সাধারণত এই খোসপাঁচড়া হয় না। তবে একদম ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে এই জায়গাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় দেখা যায় যে একই সাথে পরিবারের একাধিক সদস্য এই রোগে ভোগে।
জটিলতা:
স্ক্যাবিসের চুলকানি থেকে অনেক সময় ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না করালে ত্বকে জটিল সমস্যা যেমন: একজিমা (চামড়া কালচে ও পুরু হয়ে যাওয়া) দেখা দিতে পারে। এছাড়া গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস নামে কিডনির জটিল সমস্যাও হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
খোস পাঁচড়ার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যবহার করলে খোস পাঁচড়া ভালো হয়ে যায়। এই রোগের চিকিৎসায় সাধারণত ৫% পারমেথ্রিন (৫% Permethrin ) নামের ক্রিম ব্যবহার করা হয়। এই ক্রিম ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে মেখে প্রায় ৮-১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়ে সারা শরীর ভালো করে ডলে গোসল করে ফেলতে হয়। এজন্য চিকিৎসকেরা এই ক্রিম সাধারণত রাতে শোবার পূর্বে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক সপ্তাহ পর একই নিয়মে এই ক্রিম আরেকবার ব্যবহার করতে হয়। ৫% পারমেথ্রিন ছাড়াও ১% লিনড্যান (1% Lindane), ১০% ক্রোটামিটন (10% Crotamiton), ২৫% বেঞ্জাইল বেঞ্জোয়েট লোশন (25% Benzyl Benzoate) ইত্যাদি ঔষধও স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
চুলকানির সমস্যা থেকে রক্ষা পাবার জন্য এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ত্বকে ইনফেকশন থাকলে এই পারমেথ্রিন ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে এক কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।
এই ঔষধ কেবল আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে ব্যবহার করলে হবে না। যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই বিছানা, তোয়ালে ও কাপড়-চোপড় ব্যবহার করে এবং একই কক্ষে ঘনিষ্ঠ সাহচার্যে থাকে তাদেরকেও এই রোগের উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, চিকিৎসা নিতে হবে।
এর পাশাপাশি ব্যবহার করা কাপড়-চোপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে, ভালো করে রোদে শুকাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বালিশ, তোষক রোদে দিতে হবে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ পরিহার করা।
লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), শিশু নেফ্রোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, ঢাকা।
ওগো দয়াল মাওলা আপনি সকলকে সমস্ত রোগ শোক থেকে শেফা দান করুন।
এই সমস্যার রুগী যারা তারা উপকৃত হবেন আশা করি !