স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-জীবিকা নির্বাহ

1
226

করোনা মহামারির দুঃসহকাল কবে নাগাদ শেষ হবে, কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে প্রাণঘাতী এই ভয়াবহ ভাইরাস; তা নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ। কবে নাগাদ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার ও বাজারজাত হবে, তাও অনিশ্চিত। ততদিন পর্যন্ত মানুষকে বসবাস করতে হবে করোনাকে নিয়েই। সুতরাং দশটা রোগ-ব্যাধির মতোই মানুষকে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। তাই বলে জীবনের পাশাপাশি জীবিকা তো থেমে থাকবে না। কোনো দেশের জন্যই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন ইত্যাদি কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে না। দৈনন্দিন জীবিকা তথা অর্থনীতির চাকা অচল বা স্থবির হয়ে গেলে জীবনও থেমে যেতে বাধ্য। সেই অবস্থায় এক সঙ্গে জীবন-জীবিকা নির্বাহ তথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু সচল রাখার কথা ভাবছে সরকার। লকডাউন প্রত্যাহারের পর মানুষের কর্মতৎপরতা ও চলাচল শুরু হলে আবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৬ শতাধিক এবং আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ রোধে সরকার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কথা চিন্তা করলেও মানুষের জীবিকা সচল রাখার কথাও ভাবছে।

এর জন্য প্রথমেই ভাবা হচ্ছে দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল ও কাজ করা। প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রাথমিক বার্তা পাঠানো। স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়িয়ে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত অক্সিজেন সুবিধাসহ আইসিইউর সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা। এর জন্য চলতি বাজেটে করোনা মোকাবেলায় রাখা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। সর্বোপরি করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারের দিকেও সর্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। যাতে যে দেশেই এর সফল প্রয়োগ ও উৎপাদন শুরু হোক না কেন তা যেন খুব দ্রুতই বাংলাদেশে আসে, উৎপাদিত ও বাজারজাত হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিদায় নেয়ার আগে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও বলে গেছেন, টিকা আবিষ্কার হলে সবার আগে পাবে বাংলাদেশ। এটুকু স্বস্তি নিয়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করলে জীবন টিকে থাকবে নিঃসন্দেহে।
আসন্ন ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে সর্বস্তরের মানুষের চাহিদা বেড়ে যাবে বহুগুণ। লাখ লাখ পোশাক শ্রমিকসহ কোটি কোটি শ্রমজীবীর বেতন-বোনাসের বিষয়টিও জড়িত ওতপ্রোতভাবে। এর জন্য সরকারী প্রণোদনার পাশাপাশি আবশ্যক বেসরকারী উদ্যোগও। সরকার পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প সেক্টরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তা সহায়ক হবে নিশ্চয়ই। তবে, মনে রাখতে হবে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই রয়েছে ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ অবশ্য এদিক থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে। বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে খাদ্য সঙ্কট এড়ানো যেতে পারে। গ্রামগঞ্জের ধান-চালের মোকামগুলো এখন জমজমাট। তবে বহির্বিশ্বে পোশাক রফতানির চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। পোশাক শিল্প মালিকরা তা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন নিশ্চয়ই। চলতি বছর থেকে নগদ প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসী আয়ও ইতিবাচক থাকবে বলে আশা করা যায়। সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণাধীনে বলা চলে। তবু সতর্ক ও সাবধানতার বিকল্প নেই। সে অবস্থায় যথাযথ সুরক্ষাসহ শিল্প-কারখানা, মেগা প্রকল্পগুলো সচল এবং সর্বস্তরের মানুষ উদ্যোগী হলে জীবন-জীবিকা চলতে পারে হাত ধরাধরি করে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here