নারী ও শিশু ডেস্ক: বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তেকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবি (সা.)-কে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রুপ করতো. তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা (রা.)-কে। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কাওসার’ হিসেবে, যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহ.) তাঁর তাফসির গ্রন্থে বলেছেন, হযরত ফাতিমা (রা.)-এর শানে সূরা কাওসার নাজিল হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমা (রা.)-এর বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।
পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোনো খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না। অথচ রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধারা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। হযরত ফাতিমাতুয যোহরা (রা.)-এর পবিত্র বংশধারায়ই আগমন করেছেন শ্রেষ্ঠতম মহামানব সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। যার প্রতীক্ষায় ছিল জগৎবাসী। এই প্রতিশ্রুত ও প্রতিক্ষিত মহামানব বিশ্বের শতাধিক দেশে মোহাম্মদী ইসলামের প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ তার কাছে এসে মহান স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করছেন।
হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’ মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবি (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাৎম্’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন: ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’
হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপষহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মতো বিশ্বনবির সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (রা.)-এর অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবি (সা.) তাঁকে সর্বযুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবি (সা.)। রাসুলে খোদা (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহ্কেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা-কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহ্কেও কষ্ট দেয়।’
অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবি (সা.) এটাও বুঝিয়েছেন যে, পিতার রিসালাতের ধারা বহমান রাখার অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন হযরত ফাতিমা (রা.)। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।
হযরত ফাতিমা (রা.)-কে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবি (সা.) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোনো ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহ্ও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহ্ও আনন্দিত হন।’
অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমা (রা.)-এর রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠা, আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি।
হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর শোকে কাতর হযরত ফাতিমা (রা.)-কে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন সান্ত্বনা দিতেন। আল্লাহ্ তায়ালার সঙ্গে হযরত ফাতিমা (রা.)-এর কথোপকথনের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে ‘মাসহাফই ফাতিমা’ নামে বিখ্যাত গ্রন্থটি; যা লিখে গেছেন হযরত আলী (রা.)।
বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ (রা.) বলেন : হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। আল্লাহর রাসুলের বিচ্ছেদ যাতনায় মা ফাতিমা (রা.) জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা (রা.) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসুলে খোদা (সা.) ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা (রা.) তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই হযরত রাসুল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়; তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে।
হযরত ফাতিমা (রা.) পিতার জাহেরি বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তারচেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদা (সা.)-এর কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মোকাবিলার মতো কঠিন ধৈর্যের খোদায়ি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানব হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত ফাতিমা (রা.)-কে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি ওফাত লাভ করেন। তাঁর ওফাতের তারিখ ৩ জমাদিউস সানি।
রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ্ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হলো জ্ঞানের দরজা।
হযরত ফাতিমা (রা.) পিতার উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: মহান আল্লাহ্ আমাদের আনুগত্যকে করেছেন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ আমাদের নেতৃত্বকে করেছেন অনৈক্যের পথে বাধা। আর তিনি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে করেছেন ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম।
Nice
লেখাটি পড়ে অনেক শান্তি পাইলাম। আলহামদুলিল্লাহ
মারহাবা ইয়া আওলাদ এ রাসুল (সঃ)