নারী ও শিশু ডেস্ক : আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত ফাতেমা (রা.)-এর ঘর আলো করে চারজন মহাপবিত্র সন্তান দান করেন। তারা হলেন ইমাম হাসান (রা.), ইমাম হোসেইন (রা.), হযরত জয়নাব বিনতে আলী (রা.) ও হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (রা.)। এই চার সন্তান ছিলেন তাদের পিতা-মাতার মতো মহাপবিত্র ও মহান চরিত্রের অধিকারী। মুসলিম সমাজের জন্য আদর্শ স্থানীয় এই চার সন্তানকে উপযুক্ত করে প্রতিপালনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন হযরত ফাতিমা জাহরা (রা.)। হযরত ফাতিমা তাঁর সন্তানদের এমনভাবে প্রতিপালন করেন যে, এসব সন্তান ইসলামের অনেক কঠিন সময় ও ক্রান্তিকালে নানাজানের প্রতিষ্ঠা করা মোহাম্মদী ইসলাম রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) ইমামতের উচ্চতম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে মুসলিম সমাজকে নেতৃত্ব দেন।
হযরত ফাতিমা (রা.)-এর বংশধরদের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় তারা জন্মগতভাবেই নিষ্পাপ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া এবহ্মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ ছাড়া তাঁরা কোনো কাজ করেননি। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে উদ্দেশ করে বলেছেন: মহান আল্লাহ্ আমাকে পৃথিবীর সব মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আমার পরে তোমার স্বামী আলীকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এরপর তোমাকে করেছেন বিশ্বের নারীকুলের শিরোমণি এবং তোমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইনকে করেছেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার।
একটি সংসারের স্বামী ও স্ত্রীকে যেসব গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় তার মধ্যে ঘরের মধ্যে ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি অন্যতম। সন্তানদের উপযুক্ত খাবার ও পুষ্টির ব্যবস্থা করে তাদের শারীরিক বৃদ্ধির দিকে যেমন মনযোগ দিতে হবে তেমনি তাদের আত্মিক চাহিদা পূরণ করে উন্নত মানবীয় গুণাবলির বিকাশ ঘটানোও পিতামাতার কর্তব্য। শিশুদের যেসব মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের কাছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের পরিচয় প্রকাশ করা। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ পালন করতে শেখানো। এ কাজগুলি হযরত মা ফাতেমা (রা.) সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছিলেন।
আল্লাহ্র ইবাদতের একনিষ্ঠতায় আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এবং হযরত আলী (রা.)-এর পরেই ছিল তাঁর অবস্থান। বিশ্বনবি (সা.) এ সম্পর্কে বলেন: আমার মেয়ে ফাতিমা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী। সে আমার কলিজার টুকরা এবং আমার অন্তর জুড়ে তার অবস্থান। সে যেন মানব শরীরে অবস্থান নেওয়া বেহেশতের হুর। সে যখন আল্লাহ্র ইবাদতে দাঁড়ায় তখন তাঁর নূরের আলো আসমানের ফেরেশতাদের আলোকিত করে তোলে।
মানবতার মুক্তির ধর্ম ইসলামে আল্লাহর বান্দার সেবাকেই আল্লাহ্র ইবাদত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঠিক এ কারণেই পবিত্র কুরআনে সার্বক্ষণিক নামাজে কায়েম থাকার নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই যাকাতের কথা এসেছে এবং নামাজ ও দান করাকে পাশাপাশি স্থান দেওয়া হয়েছে। হযরত ফাতিমা (রা.)-এর জীবন অনেক সাধাসিধে হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের এই নির্দেশ পালনে তাঁর কোনো তুলনা ছিল না। আপন স্বামী হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু সার্বক্ষণিক দয়াল রাসুল (সা.)-এর খেদমতে নিয়োজিত থাকায় পরিবারে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা থাকা স্বত্ত্বেও হযরত মা ফাতেমা (রা.) অভাবী ও ক্ষুধার্ত লোকের কথা ভুলে যাননি।
হযরত জাবের আব্দুল্লাহ আনসারি এ সম্পর্কে বলেন, একদিন আসরের নামাজের পর জীর্ণবস্ত্র পরিহিত এক বৃদ্ধ মসজিদে প্রবেশ করে। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) তার কাছে কুশল জিজ্ঞাসা করলে সে বলে- আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে কিছু খাবার দিন। আমার কিছু টাকা-পয়সা এবং ভালো কাপড়ও দরকার। আল্লাহ্র রাসুল বৃদ্ধ ব্যক্তিকে হযরত ফাতেমা (রা.)-এর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য হযরত বেলালকে নির্দেশ দেন। বৃদ্ধ লোকটি রাসুলের কন্যার কাছে গিয়ে তার সব অভাবের কথা খুলে বলেন। হযরত মা ফাতেমা (রা.) নিজের গলার হারখানা খুলে ওই দরিদ্র ব্যক্তিকে দিয়ে বলেন- এটি বিক্রি করে আপনি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে নিন।
প্রাণপ্রিয় রাসুলের কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.) নিজের গলার হার বৃদ্ধকে দিয়ে দিয়েছেন এ কথা শুনে হযরত আম্মার (রা.) বৃদ্ধের কাছ থেকে হারখানা কিনে নিয়ে তার সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। এরপর বৃদ্ধ ব্যক্তি হযরত রাসুল (সা.)-এর কাছে ফিরে আসেন। বিশ্বনবি তাকে জিজ্ঞাসা করেন তার প্রয়োজনগুলো মিটেছে কিনা। সে উত্তর দেয়: আপনার কন্যার দয়ার দানে আমার এখন আর অভাব নেই। আমি আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন ফাতিমাকে এমন কিছু দান করেন যা কেউ কোনোদিন চোখে দেখেনি এবং কানেও শোনেনি। বৃদ্ধের এ কথা শোনার পর হযরত রাসুল (সা.) বলেন- আল্লাহ্ তায়ালা এই পৃথিবীতেই হযরত ফাতেমা (রা.)-কে এমন জিনিস দান করেছেন। হযরত ফাতেমা (রা.)-কে আল্লাহ্ আমার মতো পিতা দিয়েছেন, আলীর মতো স্বামী দিয়েছেন এবং হাসান ও হোসাইনের মতো সন্তান দান করেছেন।
সুবহানাল্লাহ
আমিন