হাকিকতে রোজা পালনের উপায় কী?

0
477

‘রোজা’ শব্দটি ফারসি। আরবিতে এ শব্দটিকে ‘সাওম’ বলা হয়। ‘সাওম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, পানাহার পরিহার, উপবাস ইত্যাদি। রোজার পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার ও পাপাচার হতে বিরত থেকে অন্তরে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকাকে ‘সাওম’ বা রোজা বলে।
বস্তুত রোজা রাখার বিধান সর্বযুগে ছিল। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবি-রাসুলের যুগেই রোজার বিধান চালু ছিল। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পারো।” (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৮৩) সুতরাং রেজা কেবল উম্মতে মোহাম্মদীর উপরই ফরজ করা হয়নি বরং রোজা রাখার বিধান পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল।

রোজার হাকিকত হলো মু’মিনগণ রোজা পালনের মাধ্যমে আত্মিক দোষত্রুটি সংশোধন করে পরিশুদ্ধ হতে পারেন। আত্মাশুদ্ধ না হলে কোনো ইবাদতই শুদ্ধভাবে পালন করা যায় না। কেননা নফ্স বা জীবাত্মা কু-রিপুমুক্ত না হলে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় এখলাস তথা একনিষ্ঠতা অর্জন করা যায় না। রোজা মানুষের কু-রিপুসমূহকে সংযমী করে শুদ্ধভাবে ইবাদতের পথ সৃষ্টি করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রোজা পালনের মাধ্যমে যারা নিজের জীবপ্রবৃত্তিকে পরিশুদ্ধ করে হৃদয়ে আল্লাহ্কে লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারাই সফলতা লাভ করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন (মহান আল্লাহ্ বলেন)- “রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড : পৃষ্ঠা ২৫৪) আর রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্কে পাওয়ার অর্থ হলো নিজের মাঝে আল্লাহর চরিত্র বিকশিত হওয়া। মূলে হাকিকতে রোজা হচ্ছে- মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে রোজা পালনের মাধ্যমে অন্তরের পাপ কালিমা দূর করে হৃদয়ের মাঝে বিরাজমান আল্লাহর সুপ্ত নূর বিকশিত করা এবং আল্লাহর চরিত্রে নিজেকে চরিত্রবান করা।

প্রকৃত রোজা ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, রোজা পালনকারীগণ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা- (১) সাধারণ শ্রেণির রোজা, (২) মধ্যম শ্রেণির রোজা (৩) উচ্চ শ্রেণির রোজা বা হাকিকতে রোজা।

সাধারণ শ্রেণির রোজা : সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র পানাহার ও কামাচার হতে বিরত থেকে রোজা পালন করাকে সাধারণ শ্রেণির রোজা বলে।
মধ্যম শ্রেণির রোজা : সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার হতে বিরত থেকে রোজা পালন করাকে মধ্যম শ্রেণির রোজা বলে।
উচ্চ শ্রেণির রোজা বা হাকিকতে রোজা : সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার, পাপাচার ও পাপের কল্পনা হতে বিরত থেকে সর্বক্ষণ ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির বা স্মরণে নিমগ্ন থেকে রোজা পালন করাকে উচ্চ শ্রেণির রোজা বা হাকিকতে রোজা বলে। মূলত হাকিকতে রোজা পালনের জন্য আওলিয়ায়ে কেরামের সহবত লাভ এবং ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করা প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here