দেওয়ানবাগ ডেস্ক: করোনা মহামারি চলাকালীন বিশ্বে ধনীদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ধনী-গরিব বৈষম্যও। সম্পদের তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। দ্য ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্যারিসভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব বলছে, ১০ শতাংশ ধনীর হাতে কুক্ষিগত হয়েছে ৭৬ শতাংশ সম্পদ। এই সময়ে অতিরিক্ত ১০ কোটি মানুষ ডুবে গেছেন চরম দারিদ্র্যে।
২২৮ পৃষ্ঠার সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয় ১০ শতাংশ ধনী মানুষের হাতেই বিশ্বের মোট আয়ের ৫২ শতাংশ চলে গেছে। অন্য দিকে নিম্নআয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে বৈশ্বিক আয়ের মাত্র ৮ শতাংশ। ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ১ থেকে ৩ শতাংশ। করোনা মহামারিতে অধিকাংশ ধনীর সম্পদ হয়েছে অঢেল। ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের সহপরিচালক লুকাস চ্যান্সেল বলেন, ‘একদিকে বাড়ছে ধনকুবেরের সংখ্যা, অন্যদিকে ১০ কোটি মানুষ ডুবে যাচ্ছেন আরও চরম দারিদ্র্যের অতলে। বিশ্বের ১০ শতাংশ ধনী মানুষের হাতেই বিশ্বের ৭৬ শতাংশ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৫২ ধনী ব্যক্তির সম্পদ গত ২৫ বছরে ৯.২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তথা অতিধনীদের পারিবারিক সম্পদের সম্মিলিত পরিমাণ বেড়ে বৈশ্বিক সম্পদের ৩.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে ছিল ২ শতাংশের সামান্য বেশি।
বিশ্বের মোট আয়ে নারীদের অংশ প্রায় ৩৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, গত ২৫ বছরে বিশ্বের ৫২ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদের মূল্য ৯.২ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপে সম্পদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমতা লক্ষ করা গেছে। এখানে মোট আয়ের ৩৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ১০ শতাংশ ধনী। তবে মধ্যপ্রাচ্য এবং নর্থ আমেরিকায় এই চিত্র পুরোপুরি ব্যতিক্রম। এই অঞ্চলে মোট আয়ের ৫৮ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে ১০ শতাংশ ধনী। সম্পদ ও আয় অসমতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও অসমতার মারাত্মক চিত্র ধরা পড়েছে এই প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য ৩৩টি আইসিইউ শয্যা আছে, সেখানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আছে মাত্র ২টি। সাব সাহারা অঞ্চলে এ চিত্র আরও করুণ। সেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে শূন্য দশমিক ৬টি। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ সাতটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের শুরুতে এক-তৃতীয়াংশেরও কম হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মাস্ক ছিল। প্রতিবেদনটির মুখবন্ধ লিখেছেন ভারতীয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার দুফলো। তারা বলেছেন, সঠিক নীতি করা হলে অসমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আবার ভুল নীতির কারণে অসমতা লাগাম ছাড়া হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তারা রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের নব্য উদারনীতিবাদী (বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি) নীতির সমালোচনা করেছেন। এ ধারার কারণে ভারত ও চীনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও ভারত এখনো বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশের একটি বলে মন্তব্য করেন এ দুই অর্থনীতিবিদ।