আইসিইউ (ICU) চিকিৎসা ব্যবস্থা

আইসিইউ (ICU) চিকিৎসা ব্যবস্থা

ডা. মো. তারেক ইমতিয়াজ (জয়)

আইসিইউ (ICU) কী?

আইসিইউ (ICU) বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ (Intensive care unit) হচ্ছে হাসপাতালে একটি বিশেষ বিভাগ যেখানে নিবিড় তত্ত্বাবধানে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র সেই সব রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে যাদের জীবন আশংকাজনক, যাদের মৃত্যু ঝুঁকি আছে এবং যাদের বাঁচানোর জন্য লাইফ সাপোর্ট মেশিন বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্রের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। তবে একটি বিষয় হলো যে লাইফ সাপোর্ট মেশিন বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্রের সহযোগিতাই রোগীর আইসিইউতে থাকার একমাত্র  কারণ নয়। অনেক জটিল রোগী থাকে যাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয় তাদেরকেও অনেক সময় এই আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেবার প্রয়োজন পরে।

অনেক সময় জটিল রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের আইসিইউ-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে থাকেন। তখন অনেকের মনেই উৎকণ্ঠা বাড়ে। কারণ, আইসিইউ-এর চিকিৎসা ব্যায়বহুল। নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারের কারও পক্ষে এই আইসিইউ-এর খরচ বহন অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আবার এতো খরচের পরেও দেখা যায় রোগীকে বাঁচানো যায় না।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের আইসিইউ সেবা আছে। যেমন:

  • নবজাতক আইসিইউ (যা অনেকে NICU নামে চিনে)
  • শিশু বা পেডিয়াটিক আইসিইউ ((যা অনেকে PICU নামে চিনে)
  • জেনারেল আইসিইউ
  • কার্ডিয়াক আইসিইউ
  • রেনাল আইসিইউ

লাইফ সাপোর্ট মেশিন বলতে কি বোঝায়?

লাইফ সাপোর্ট মেশিন বলতে মূলত ভেন্টিলেটর মেশিনকে বোঝায়। আমরা জানি যে ফুসফুস আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হতে সাহায্য করে। রোগের জটিলতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে যদি ফুসফুস তার এই স্বাভাবিক কাজ ঠিকমতো করতে না পারে তখন শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। তখন এই কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর মেশিন রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয় মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই ভেন্টিলেটর মেশিন মূলত ফুসফুসের কার্যকলাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ বজায় রাখতে এই মেশিনের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। কোনো কারণে হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন ভেন্টিলেটর মেশিন বা লাইফসাপোর্ট মেশিন এককভাবে রোগীকে বাঁচাতে পারে না। আবার যদি কোনো কারণে ফুসফুস বেশি রোগাক্রান্ত হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রেও অনেক ক্ষেত্রে এই ভেন্টিলেটর মেশিন রোগীকে খুব একটা সহায়তা করতে পারে না। কারণ, এই ভেন্টিলেটর মেশিনের কাজ হলো রোগীর ফুসফুস পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া।  সেই অক্সিজেনকে রোগীর ফুসফুস রক্তে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে। রোগীর ফুসফুস বেশি রোগাক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেখা যায় যে লাইফ সাপোর্ট মেশিনে থাকা সত্ত্বেও রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকছে না এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো যায় না।

অনেক সময় মৃত রোগীকে লাইফ সাপোর্ট মেশিনে দীর্ঘদিন রেখে কোনো কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। এই অভিযোগ কতটুকু সত্য?

লাইফ সাপোর্টে থাকা একটি রোগীর যতক্ষণ হৃদস্পন্দন থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জীবিত। ভেন্টিলেটর মেশিন থাকা কোনো রোগীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে, সেই মৃত রোগীকে লাইফ সাপোর্টে রাখার কোনো সুযোগ নেই। মানুষ যখন মারা যায়, তখন থেকেই তার শরীরে পচন শুর“ হয়। সুতরাং, এরকম একটি পচনশীল মৃতদেহকে ভেন্টিলেটর মেশিনে দীর্ঘদিন রাখার কোনো সুযোগ নেই এবং রোগীর মারা যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখারও কোনো সুযোগ নেই।

[লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য); সহকারী রেজিস্টর, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *