আসন্ন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও বাংলাদেশ

আসন্ন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও বাংলাদেশ

এম এ খালেক: করোনা-উত্তর বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হওয়ার লগ্নে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করছে, বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটি এখনো মন্দা ঘোষণা করেনি। মার্কিন অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হলেই মন্দা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ বছর মার্কিন অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির দুই-তৃতীয়াংশ আসে ভোক্তা ব্যয় থেকে। মার্কিন জনগণ তাদের ভোগ ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। তার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মূল্যস্ফীতির প্রতিকারহীন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমানোর জন্য অধিকাংশ দেশই নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত ৭৭টি দেশ তাদের নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। প্রচলিত অর্থনৈতিক ধারণা বা সূত্রমতে, নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিলে বাজারে মানি সার্কুলেশন কমে যায়। ফলে একসময় মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। কিন্তু এবার কোনো দেশেই নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী এবং বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতিও এখন ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির ছোঁয়া অনুভব করছে। সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক, দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। এটা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৮ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে অধিকাংশ দেশই তাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আশঙ্কাজনভাবে কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থাও খুবই খারাপ। ভারতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমেছে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে ভারতের যে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে তা ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রিজার্ভ। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে রুপির তীব্র অবমূল্যায়ন ঠেকানোর জন্য রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলার বাজারে ছেড়ে দেয়। আরবিআই সম্প্রতি রিজার্ভ থেকে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। ৮ জুলাই ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারত এ বছর রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পতিত হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আবারও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। ১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে নীতি সুদহার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। গত ২৭ বছরের মধ্যে নীতি সুদহার বৃদ্ধির এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। দেশটির অর্থনীতিবিদগণ মনে করছেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে না। বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের নিচে থাকলেও এ বছর শেষের দিকে তা ১৩ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ তুরস্কের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *