দেশে ‘চোখ ওঠা’ রোগের প্রকোপ

দেশে ‘চোখ ওঠা’ রোগের প্রকোপ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে অতি ছোঁয়াচে কনজাংকটিভাইটিস বা চোখের প্রদাহ, স্থানীয়ভাবে যা ‘চোখ ওঠা’ নামে পরিচিত। আগামী দুই থেকে তিন মাস এই রোগের প্রকোপ থাকতে পারে।

এই ভাইরাসের কারণে সিরাজগঞ্জের একটি চক্ষু হাসপাতালের অপারেশন কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক হতে লিফলেট বিতরণও করা হচ্ছে।

আক্রান্ত যাত্রীদের বিদেশ ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. জাফর খালেদ গত বুধবার বলেন, ‘প্রতিদিনই চোখ ওঠা বা ‘কনজাংকটিভাইটিস’ রোগী আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসছে। এক ধরনের ভাইরাস এই রোগের কারণ। শিশুরা এতে আক্রান্ত হলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাচ্ছে। বড়দের সময় লাগছে সাত থেকে ১০ দিন। এটা ছোঁয়াচে। করোনা ভাইরাসের মতোই এটা ছড়াচ্ছে। আক্রান্তদের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ নিয়ে আইসোলেশনে (আলাদা) থাকতে হবে। অফিস বা স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চোখে ব্যথা হলে বা আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হলে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এ রোগের প্রকোপ থাকতে পারে আরো দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত।’

সিলেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ‘চোখ ওঠা’ রোগ। আতঙ্কিত হওয়ার পর্যায়ে না গেলেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সিলেট শহরতলির নালিয়া এলাকার বাসিন্দা ফয়জুর রহমান বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমার চোখ উঠেছে। আমার চোখ ওঠার ১ দিনের ব্যবধানে আমার শিশুসন্তান, স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের চোখ উঠেছে। সারাক্ষণ চোখে জ্বালাপোড়া করে।’ একই অবস্থা নগরের ঘাসিটুলা এলাকার ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মীর প্রথমে চোখ ওঠে। তার চোখের অবস্থা দেখেই ছুটি দিয়ে দিই। কিন্তু পরদিনই আমি আক্রান্ত হই। পরে পরিবারের চারজন আক্রান্ত হয়। ’

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে গত সোমবার একজন আক্রান্ত হন। মঙ্গলবার আরো দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। দ্রুত ছড়াচ্ছে রোগটি। শুধু সিলেট নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এমন হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ রোগ নিয়ে তো আর কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয় না। বেশিরভাগ মানুষই ফার্মেসিতে গিয়ে সাধারণ ড্রপ দিয়েই চিকিৎসা সারছে। সে কারণে আক্রান্তদের সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই কেউ না কেউ আক্রান্ত। পরিবেশদূষণ থেকে হয়তো এবার এ রোগের ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জ জেলায় ‘চোখ ওঠা’ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ফরিদ উদ্দিন জানান, এ বছর এই রোগে আক্রান্ত রোগী প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে হাজারের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

স্থানীয় ডা. এম এ মতিন মেমোরিয়াল বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাতাসের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ায় একজনের কাছ থেকে আরেকজন খুব সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য রোগীকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাইরে গেলে কালো চশমা পরা, পরিষ্কার টিস্যু বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করাসহ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, ‘চোখ ওঠা রোগী থেকে দূরে থাকতে এবং চোখ উঠলে কী কী করণীয় সে বিষয়ে প্রত্যেকটি হাসপাতালে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছি এবং লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *