মন্দা অর্থনীতিতে গতি আনবে কৃষি

মন্দা অর্থনীতিতে গতি আনবে কৃষি

মন্দা অর্থনীতিতে গতি আনবে কৃষি

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: যুদ্ধ-মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, তা থেকে উত্তরণে কৃষি উৎপাদনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকেও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নির্দেশনা। আর এই নির্দেশনা অনুসারে দেশের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই পতিত জমিগুলো যাতে কৃষক আবাদের আওতায় আনতে পারেন সে লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকদের সহায়তা দিতে কৃষি খাতের জন্য সম্প্রতি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে পোলট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদনে সহজ শর্তে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ধান, শাকসবজি, ফল ও ফুল চাষেও ঋণ মিলবে এ তহবিল থেকে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে। চাষের আওতায় আনতে হবে সরকারি-বেসরকারি বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোকে চিঠি পাঠানো ছাড়াও পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে কমিটি গঠন হয়েছে। এরই মধ্যে চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। বেসরকারি খাতের অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে জোর কর্মতৎপরতা। কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ। সরকার এরই মধ্যে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরে ১৫ হাজার ৭০৭টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পুষ্টিবাগান থেকে এক বছরে গড়ে ৩৭৮ কেজি সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এর ফলে ৩ হাজার ৭৮২ একর অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আসবে বলে জানান কর্মকর্তারা

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলপথের অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

কত জমি পতিত আছে : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৮ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বর্তমানে পতিত ও অনাবাদি কিন্তু আবাদ হতে পারে এমন জমির পরিমাণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর। এই হিসাবে অবশ্য হাওর ও পাহাড়ের কিছু অংশ নেই। হাওর, পাহাড়ের অংশ হিসাবে ধরলে সব মিলিয়ে দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ কত হতে পারে তার সঠিক তথ্য নিয়ে একেক সংস্থার একেক হিসাব পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভূমি জরিপ তথ্যে যা পাওয়া গেছে তা হলো- দেশে আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর যা ধরেই কাজ করছি আমরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পুরো জমি আবাদের আওতায় আনতে পারলে এটি শুধু উৎপাদন বাড়াবে তা-ই নয়, যুদ্ধ-মহামারিতে আক্রান্ত অর্থনীতিতে গতি আনতেও সহায়তা করবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *