মানসিক বিকাশে শিশুর যত্ন

মানসিক বিকাশে শিশুর যত্ন

মারুফ হোসেন: শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। পরিবারের সদস্যদের আদরযত্নে শিশু বেড়ে ওঠে। শিশুদের দেখলে যে কারো মনেই মমতা জাগ্রত হয়। তাকে সবাই কোলে নিতে চায়। সব পিতামাতাই চায় তাদের সন্তান ভালোভাবে বেড়ে উঠুক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কেমন পরিবেশ দরকার, সেই সম্পর্কে অজ্ঞ অনেকে। দেখা যায় অনেক পরিবারে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। বড়রা ছোটদের স্নেহ করে না, আবার ছোটরা বড়দের করে না সম্মান। সামান্য বিষয় নিয়ে একে অন্যকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে দেখা যায়। যা শিশুর কোমল মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

বর্তমান সময়ে একক পরিবার বেশি দেখা যায়। গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে শহরে আসা এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম। সংসারের হাল ধরতে পরিবারের প্রধান অর্থাৎ বাবা অথবা মা কিংবা উভয়কে বিভিন্ন অফিস, গার্মেন্টস বা কলকারখানায় কাজ নিতে হয়। তাদের দিনের একটি বড় অংশ সময় অফিসে কাটাতে হয়। ফলে শহরের কনক্রিটের চার দেয়ালে থাকা শিশুরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে বেশি সময় পায় না। যৌথপরিবারে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার যে আনন্দ তা থেকে বঞ্চিত হয় তারা।

অনেকে পরিবারে সন্তানরা তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে বোঝা ভাবেন। তাদের সেবাযত্ন দূরে থাক যেন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারলেই বাঁচেন তারা। অনেক বউ আছেন, যারা শশুর-শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কিন্তু তিনি ভুলে যান তাকেও একদিন শাশুড়ি হতে হবে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে দূরে ঠেলে দেওয়া মানে শিশুদের তাদের দাদা-দাদি ও নানা-নানির আদরযত্ন থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া। বাবা-মায়ের সেবাযত্ন করা সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাবা-মাকে ভালোবাসুন। শিশুদের তাদের সঙ্গে থাকতে দিন। কারণ দাদা-দাদি ও নানা-নানির আদর সোহাগ শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের সঙ্গে গল্পগুজব করে বেশ আনন্দ লাভ করে। তারাও তাদের নাতি-নাতনিকে গল্প শোনাতে পছন্দ করে। শিশুরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে, জানতে পারে। পিতা-মাতার অবর্তমানে তারা শিশুর সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তাই দাদা-দাদি ও নানা-নানির সাহচর্য শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকাল শিশুর হাতে বইয়ের পরিবর্তে মোবাইল ফোন দেখা যায়। যা জাতির জন্য একটি অশনিসংকেত। শিশুর হাতে বই তুলে দিন, মুঠোফোন নয়। তার হাতে বই তুলে দেওয়ার মানে এই নয় যে, তার কাঁধে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেবেন। তাকে একটু একটু করে পড়তে শেখান। শিশু বই না পড়ুক বইয়ের ঘ্রাণ নিক। দেখবেন নতুন বই হাতে পেলে শিশু কত আনন্দ পায়। বইটা খুলে খুলে সে দেখে। বইয়ের ভেতর আঁকা ছবি দেখে সে আনন্দ লাভ করে। আবার হাতে কলম পেলে আঁকার চেষ্টা করে। এভাবে তার কাছে বই-কলম-খাতা থাকলে তার মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
আজকের দিনে খেলার মাঠের আকাল চলছে গ্রাম-শহর সবখানে। একটু খালি জায়গা ফেলেই নতুন নতুন ভবন তৈরি হয় যত্রতত্র। শিশুদের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খেলার জায়গার অভাবে অনেক শিশু খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে হাতে মোবাইল তুলে নিয়েছে। মোবাইল গেমসে আসক্ত হচ্ছে তারা। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও চিপায়-চাপায় সামান্য একটু জায়গা পেলে সেখানে খেলাধুলা করে কেউ কেউ। শিশুরা ভবিষ্যতের দেশ গড়ার কারিগর। দেশের যোগ্য নেতৃত্ব তাদের মধ্যে থেকেই উঠে আসবে। এই মুখস্থ কথাগুলো তো আমরা সবাই জানি। তবে কেন শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে যত্নবান হই না?

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *