রপ্তানি বাজারে সাফল্য পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

রপ্তানি বাজারে সাফল্য পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

নারী ডেস্ক: চাকরির বেতনে খুশি ছিলেন না। সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসা করবেন। স্বামীর সহায়তায় পাটজাত পণ্য তৈরি, বাজারজাত ও বিক্রয় সম্পর্কে নেন প্রশিক্ষণ। এরপর পাটের তৈরি নানা ধরনের ব্যাগ তৈরি শুরু করেন।
সদস্য হন অনলাইন মার্কেট পেস আলিবাবা ডটকমের। প্রথম অর্ডার পান আয়ারল্যান্ড থেকে। লাভ তেমন না হলেও অভিজ্ঞতা হয়-কিভাবে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু, এখন বছরে এক কোটি টাকার বেশি অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। বলা হচ্ছে, তুলিকা ইকো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ইশরাত জাহান চৌধুরীর কথা।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের সামনে আয়োজন করা হয় দশম জাতীয় এসএমই মেলা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী ওই মেলা হয়।
মেলায় স্টল নেওয়া ইশরাত জাহান চৌধুরী তাঁর ব্যবসার শুরুটা করেন ২০১৭ সালে। এক বছর পর ২০১৮ সালে দেশের বাইরে রপ্তানি শুরু করেন। ইউরোপের ছয়টি দেশে তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করছেন। রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় রয়েছে নিজস্ব ফ্যাক্টরি। মাইক্রো উদ্যোক্তা হিসেবে নারী ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন বর্ষসেরা জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২২।
তিনি বলেন, ‘একটা ব্যাংকে চাকরি করতাম। আমার যখন বাচ্চা হলো তখন চাকরি ছেড়ে দিই। পরে সিদ্ধান্ত নিই আবার চাকরি করব। তারপর একটা বেসরকারি ইনস্টিটিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সেখানে আট মাস চাকরি করি। তখন আমার মনে হচ্ছিল, চাকরি থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তারপর ব্যবসা করার চিন্তা করলাম। চাকরিও ছেড়ে দিলাম। তখন পাটজাত পণ্যের ওপর ট্রেনিং নিলাম। নিয়ে আলিবাবা ডটকমের মেম্বার হই। এরপর আমরা একটা অর্ডার পেলাম। প্রথম অর্ডার ছিল আয়ারল্যান্ডের। এটা খুবই ছোট কাজ ছিল। ওটাতে আমাদের লাভ হয়নি। তবে ওটার মাধ্যমে জানতে পারলাম, কিভাবে রপ্তানি করতে হয়। ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপের ছয়টি দেশে আমার উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করছি। এখন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৫০ জন কর্মী কাজ করেন আমার ফ্যাক্টরিতে। এর মধ্যে নারীই বেশি।’

ব্রিন জা জুট হ্যান্ডিক্রাফটের স্বত্বাধিকারী স্মিতা চৌধুরী। তিনি পাটজাত পণ্য, যেমন বাচ্চাদের নরম ও শক্ত খেলনা এবং ব্যাগ প্রস্তুত করেন। তাঁর ব্যবসার যাত্রা ২০১০ সালে। প্রথমে দেশের বাজারে বিক্রি করলেও ২০১৬ সাল থেকে দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানি করছেন। করোনার আগে প্রতি বছর তাঁর রপ্তানি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকার। তবে করোনার কারণে অর্ডার কমে গেছে। তাও প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেন তিনি।
স্মিতা চৌধুরী বলেন, ‘রপ্তানি করতে হলে দেশের বাইরে আয়োজিত মেলাগুলোতে অংশ নিতে হয়। সেখানে ক্রেতাদের পাওয়া যায়। পরিচিতি বাড়ে, ব্যবসার প্রসার ঘটে। প্রথম কয়েক বছর দেশের মধ্যে বিক্রি করলেও ২০১৬ সাল থেকে রপ্তানি শুরু করি। ওই বছর হংকংয়ের একটি মেলায় গেলাম। প্রথমবার জাপানের একটি অর্ডার পেলাম। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) আমাদের কিছুটা প্রমোট করে দিচ্ছেন। তাঁরা প্রতি মাসে দেশের জেলায় জেলায় মেলা করে, সেখানে আমাদের নিয়ে যান।’
স্মিতা বলেন, ‘আমি খুবই পরিশ্রম করি। মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের মণিপুর সোসাইটিতে আমার পণ্য তৈরি করি। সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে এসে বিদেশে পাঠাই; যেমন-হংকং ও জাপানে। করোনার আগে আমার ৪০ জনের মতো কর্মী ছিল। করোনার প্রভাবটা এখনো আছে ফলে লোক কমিয়ে ফেলতে হয়েছে। খুবই সুন্দরভাবে আমার সংসার চলে যাচ্ছে। কোনো হা-হুতাশ নেই। প্রতি মাসে চার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্ডার পাই। করোনার আগে বছরে দেড় থেকে ২ কোটি টাকার লেনদেন ছিল। এখন কমে গেছে। তবে বছরখানেকের মধ্যে আশা করি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।’
মেলায় আসা উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশিরভাগ পণ্যই দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়।

আয়োজকরা জানান, গত ৯টি জাতীয় এসএমই পণ্যমেলায় প্রায় ২ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা প্রায় ৩২.৮৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং ৫৩.৫০ কোটি টাকার অর্ডার পায়। মেলায় দেশীয় উৎপাদনকারী বা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাই পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পান।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *