শান্তির নোবেল তিন দেশে

শান্তির নোবেল তিন দেশে

সাহিত্য ডেস্ক: এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে মানবাধিকার সুরক্ষায় অবদানের জন্য। যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুটি মানবাধিকার সংগঠন। ৭ অক্টোবর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে বিজয়ী ব্যক্তি ও সংস্থার নাম ঘোষণা করে নোবেল ইনস্টিটিউট।

পুরস্কারের ব্যাপারে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি বলেছে, মানবাধিকার সুরক্ষায় অবদান রাখায় বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী অ্যালেস বিয়ালাৎস্কি, রুশ মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজকে চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পুরস্কার বিজয়ীরা তাদের নিজ নিজ দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। বহু বছর ধরে তারা ক্ষমতার রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও একই সঙ্গে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করেছেন।’
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার এক সঙ্গে বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনকে দেওয়াটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের মাথায় এ পুরস্কার দেওয়া হলো।

মানবতাবাদী মূল্যবোধ, সামরিকায়নবিরোধী ও আইনের শাসনের জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা দেশে দেশে আলফ্রেড নোবেলের শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার রূপকল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও সম্মানিত করেছেন।
নোবেল কমিটি বলছে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বেলারুশে গণতন্ত্র আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি। নিজ দেশে গণতন্ত্রের প্রচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি।

১৯৯৬ সালে ভিয়াসনা (বসন্ত) নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কি। এরপর এটি ব্যাপক বিস্তৃত মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক বন্দীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত ও এর প্রতিবাদ করে আসছে অ্যালেসের এই সংস্থা।
নোবেল কমিটির মতে, ইউক্রেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘যুদ্ধাপরাধ’ চিহ্নিত করা ও নথিভুক্ত করার কাজে যুক্ত রয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতায় যুদ্ধাপরাধের জন্য দোষী বিভিন্ন পক্ষকে কাঠগড়ায় দাড় করানোর লক্ষ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।’

রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন মেমোরিয়াল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮৭ সালে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানবাধিকার কর্মীরা এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি সামরিকায়নের বিরুদ্ধে লড়াই ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে মানবাধিকার ও সরকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
চেচেন যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও রুশপন্থী বাহিনী চেচেন জনগণের ওপর ক্ষমতার যে অপব্যবহার ও যুদ্ধাপরাধ করেছিল, সেসব তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেছে মেমোরিয়াল। ২০০৯ সালে চেচনিয়ায় মেমোরিয়াল শাখার প্রধান নাতালিয়া এস্তেমিরোভা সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে খুন হন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির। অন্য নোবেল পুরস্কারগুলো সুইডেনের স্টকহোম থেকে ঘোষণা করা হলেও শান্তি পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হয় নরওয়ের অসলো থেকে। কাজটি পুরস্কার প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্র অনুযায়ীই করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন শান্তিতে নোবেলজয়ী। গত বছর (২০২১) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দুই সাংবাদিক। তারা হলেন ফিলিপিন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ। সাহসিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তাদের।
১৯০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১০২ বার। এর মধ্যে বিশ্বের সংকটপূর্ণ নানা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২৫বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থাকে।
নোবেলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দুবার তিন ব্যক্তি যৌথভাবে শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত শান্তির নোবেল পেয়েছেন ১৮ জন নারী। তবে নোবেলে শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরও তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন লি ডাক থো।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *